বকেয়া আদায়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে সড়কবাতি-পানির সংযোগ বন্ধ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ও চলমান এস.এস.সি পরীক্ষার সময়ে বরিশাল নগরীর সড়ক বাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘটনায় নগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। বুধবার রাতে নগরীর কালিবাড়ী রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ শংকা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন।
কিভাবে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হচ্ছে তা সকলেরই জানা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ৬৬ কোটি টাকার উপরে নিজস্ব অর্থায়নে নগরীর উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। বকেয়ার জন্য সড়ক বাতি ও পানির সংযোগ বন্ধ করে দেয়াকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে মেয়র বলেন, তারা বকেয়ার জন্য প্রয়োজনে আমার বাসা, দপ্তর এমনকি সিটি কর্পোরেশন ভবনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারতো। কিন্তু জনগনকে জিম্মি করে তাঁদের ভোগান্তিতে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা।
মেয়র আরও বলেন, আমি এব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা দায় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, খুলনা থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, আপনারা সংযোগ দিয়ে নিন। যেহেতু বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সেখানে আমরা কিভাবে সেখানে হাত দেই? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো ছাড়া আর কিছু করার নেই উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের থেকে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কাছে বেশী বকেয়া থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাকে আপাতদৃষ্টিতে ষড়যন্ত্র বলেই মনে হচ্ছে।
এবিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধের নিমিত্ত জুম অ্যাপসের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের আন্তঃমন্ত্রণালয়-এর এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যেসব পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আছে এবং তা পরিশোধ না করলে সেসব পৌরসভা ও কর্পোরেশনের সড়কবাতি ব্যতিত অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যেতে পারে। সংযোগ পৌরসভাসমূহ ও সিটি কর্পোরেশন সমূহ প্রথমে মূল বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে। এককালীন পরিশোধ করতে না পারলে কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
এবং সারচার্জ মওকুফের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা/কোম্পনীর নিকট প্রস্তাব দিতে হবে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সড়কবাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোনো সুযোগই নেই। মেয়র বলেন, কোন ধরণের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই সড়কবাতিসহ ১১টি পানির পাম্পের সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
খতিয়ান দিয়ে মেয়র সাংবাদিকদের জানান, তার দায়িত্বপালনকালীন সময়ে মোট ১৫ কোটি ৮ লাখ ৪৮ হাজার পাওনার বিপরীতে ইতোমধ্যে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময়ে মোট বকেয়া ছিলো ২০ কোটি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৫ টাকা যার বিপরীতে কোন টাকাই পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়া সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়ে ২১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৯ টাকা সহ মোট বকেয়া দাঁড়ায় মোট ৪২ কোটি ১১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪ টাকা। এর বিপরীতে সাবেক মেয়র কামাল পরিশোধ করেছিলেন ১ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
মেয়র তার দেয়া হিসেব বিশ্লেষন করে বলেন, বিগত দুই পরিশোধের সময়ে বকেয়া টাকা যেমন আদায় করা হয়নি তেমনি ওই সময়ে সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। মতবিনিময়কালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর, বিসিসির প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, প্যানেল মেয়র-২ অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন, বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।