বগুড়ার ধুনটে তরুণ কবি নিখিল নওশাদ বিয়ে করছেন প্রেম করে। তার বিয়ে নিয়ে সাড়া পড়ে গেছে র্ভাচুয়াল দুনিয়াসহ আশপাশের এলাকাতে। তার কারণ হচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে তাকে দেনমোহর দিতে হবে ১০১টি বই।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বড়িয়া গ্রামে বোনের বাড়িতে বিয়ে করছেন নিখিল নওশাদ। তার ভালোবাসার মানুষ এবং হবু স্ত্রীর নাম সান্ত্বনা খাতুন। নিখিল নওশাদ বেসরকারি একটি কোম্পানির বিক্রয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি তিনি ধরে কবিতা লেখালেখি করেন। বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের সাতরাস্তা গ্রামে তার বাড়ি। তার হবু স্ত্রী সান্ত্বনা বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক। সান্ত্বনা সোনাতলা উপজেলার কামালেরপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে। অবশ্য দুজনেই পড়াশোনা করেছেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে।
বগুড়ার শহরের টেম্পল রোড় বইয়ের দোকানে হবু স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে নিয়ে দেনমোহরের বই কিনতে আসেন নিখিল নওশাদ। তালিকা ধরে খুঁজে খুঁজে দুই বাংলার বিখ্যাত লেখকদের বেশ কিছু বই কেনেন। হবু দম্পতির এমন বই কেনার ছবি ফেসবুকে দেয় দোকান কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই সাড়া পড়ে যায় ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়। অনেকেই বিয়েতে মোহরানা হিসেবে বই উপহার দেওয়া নেওয়ার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
বিয়ের দেনমোহর হিসেবে টাকা বা সোনাদানা নয় বরং দিতে হবে ১০১টি বই। হবু স্ত্রী এই ‘প্রিয় বই’ এর তালিকা অনুযায়ী সপ্তাহ খানেক ধরে বগুড়ার বিভিন্ন বইয়ের দোকান ঘুরে ঘুরে ৭০টি বই সংগ্রহ করছেন নিখিল।
বিয়ের দিনে দেনমোহরের কিছু বই বাকি রাখতে হচ্ছে। তবে নিখিল বলেছেন, বিয়ের পর আরও ৩১টি বই কিনে স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে মোহরানা শোধ করার ইচ্ছা আছে।
নিখিল নওশাদ বলেন, ‘কবিতার সূত্র ধরেই ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী সান্ত্বনা খাতুনের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে ভালোলাগা, ভালোবাসা। শেষে দুজনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। সান্ত্বনা শর্ত দেন, সোনাদানা নয়, বিয়ের দেনমোহর হিসেবে উপহার দিতে হবে ১০১টি প্রিয় বই। প্রিয় বইয়ের তালিকাও দিয়েছেন।’
নিখিল জানান, এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা ও বগুড়ার বিভিন্ন দোকান ঘুরে তালিকার ৭০টি বই কেনা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩১টি বই এখনো মেলাতে পারেননি তিনি। প্রিয় বইয়ের তালিকায় কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ মুজতবা আলী ছাড়াও দুই বাংলার জনপ্রিয় ও বিদেশি লেখকের বই আছে। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে কিছু বিদেশি লেখকের বইও আছে।
সান্ত্বনা খাতুন বলেন, সোনাদানা, টাকাকড়ি আমার কাছে মূল্যহীন। বই আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। এ কারণে বিয়ের দেনমোহরানা হিসেবে ১০১টি বই চেয়েছি। নিখিলের কবিতা পড়ে ওর প্রেমে পড়েছি। ওর কবিতা খুব ভালো লাগে।
বিয়ের পর পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে সান্ত্বনা খাতুনের। এবং সেই পাঠাগারেই সাজিয়ে রাখবেন দেনমোহরের প্রিয় ১০১টি বই।