শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেল আধুনিকায়নে বড় প্রকল্প

রেল আধুনিকায়নে বড় প্রকল্প

দেশের প্রধান রেল যোগাযোগ সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। টঙ্গী থেকে আখাউড়া এবং লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রকল্প দুটির ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং ডিটেইল ডিজাইন শেষ হয়েছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে প্রকল্পটি একনেকে পাঠানো হবে।

এদিকে একটি প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রেলের গতি বেড়ে যাবে। তাছাড়া এ রুটে রেলে ৩০ শতাংশ বেশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। একই সাথে বর্তমান রেল রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে প্রায় এক ঘণ্টা।

এদিকে, কক্সবাজার পর্যন্ত নুতন ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণ কাজ চলছে এডিবির অর্থায়নে। কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো পূর্বাঞ্চলে ব্রডগেজ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে ট্রান্সএশিয়ার রেলওয়ে কানেক্টিভিটি স্থাপনের বাধাও দূর হবে। ট্রান্সএশিয়ার রেলওয়ে কানেক্টিভিটির মাধ্যমে চীন, পাকিস্তান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

সূত্রমতে, লাকসাম-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-আখাউড়া রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে আশ্বাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরোটাই ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণে কয়েক বছর আগে পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ায় লাকসাম-চট্টগ্রাম এবং আখাউড়া-টঙ্গী অংশের কাজ শুরু করা যায়নি। এই দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে এডিবি এখন পাইপ লাইনে আছে।

আরও পড়ুনঃ  ভারত পাকিস্তানের চেয়ে বেশি শান্তি বাংলাদেশে

রেলের শীর্ষ সূত্রমতে, অর্থায়নের ব্যাপারে এডিবির সঙ্গে সময়মতো ঋণ চুক্তি এবং নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে আশা করা যাচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প দুটির ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। ডিটেইল ডিজাইনও শেষ হয়েছে। এই দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে এডিবি এখন পাইপ লাইনে আছে। এডিবি ছাড়াও অন্য যে কোনো অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থায়নের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে একনেকে যাবে।

প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। ব্যয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে, লাকসাম-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যার ৮৫ শতাংশ বিদেশি ঋণদাতাদের কাছ থেকে ধার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এডিবি ২০২৩ সালে লাকসাম-চট্টগ্রাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে টঙ্গী-আখাউড়া ডুয়েলগেজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর জন্য পরে সংস্থাটি আরও ঋণ অনুমোদন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, এডিবির অর্থায়নে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার ব্রডগেজের নতুন রেলনাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত বর্তমান চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তর এবং চট্টগ্রামের দোহাজারীকে ঢাকার দিকে সংযুক্ত করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  পণ্যের মূল্যতালিকা দিয়ে কি সংসার চলে?

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুধু চট্টগ্রামের সঙ্গে নয়, ব্রড গেজে ট্রেন চলাচল করতে পারবে কক্সবাজারে। এখন শুধু ব্রড গেজে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার রেল লাইনকে যুক্ত করতে পাহাড়তলী হয়ে দোহাজারী পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজে কর্ড লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় পুরোটাই ব্রডগেজ। পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পূর্বাঞ্চলে এখনো পর্যন্ত পুরোটাই মিটারগেজ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধুমাত্র ঢাকা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন রয়েছে।

প্রকৌশলীরা আরও জানান, ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলতে পারে। পূর্বাঞ্চলে রেলের ব্রড গেজ লাইন স্থাপন হলে পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও খুলনার সঙ্গেও চট্টগ্রামের যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। পশ্চিমাঞ্চলে ব্রড গেজে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পূর্বাঞ্চলে এখন অবধি মিটার গেজ রেল চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন