বিশ্বে চাহিদা বড়ায় দেশে কাঁকড়াচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেকে। কক্সবাজারের কাঁকড়া এখন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছে
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, হংকং ও সিঙ্গাপুরে কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নিয়মিত ২০টিরও বেশি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হতো। এখন তা বেড়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মার্কিন ডলার। ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। এরপর রপ্তানি বন্ধ থাকে প্রায় ৩ বছর। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবার বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি আয়ও বাড়ছে
কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের নোনাজলে কাঁকড়া চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি কাঁকড়ার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঁকড়াচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেকে। কক্সবাজারের কাঁকড়া এখন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছে। আশির দশকের শুরুতে প্রথম অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে। জেলার অনেক চিংড়ি চাষি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দরপতনের কারণে এখন অনেকে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২৮ হাজার টন কাঁকড়া রপ্তানি করছে।
জানা গেছে, হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৯৭৭ সালে যে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়েছিল, তা এখন যাচ্ছে বিশ্বের ২০টিরও বেশী দেশে। এখানেই শেষ নয়, দেশের প্রায় ১৫ প্রজাতির কাঁকড়াই বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বিশ্ববাজারে রপ্তানির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশে কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার কক্সবাজার ও সুন্দরবন। তবে বাড়তি দামের আশায় ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহোৎসবও চলছে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় মৎস্য পুরস্কার এর স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এবং বিদেশে রপ্তানি আয়ের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী কক্সবাজারের অংছিন নতুন এক পথ দেখিয়েছে মৎস্য চাষিদের। কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোক্তা অংছিনের পথ ধরে এখন দেশজুড়ে কাঁকড়া উৎপাদনের হিড়িক পড়েছে।
অংছিন জানান, ভাইরাসমুক্ত কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি না থাকায় সফলতা বেশি। আগে মানসম্মত কাঁকড়া চাষের জন্য বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ঝুড়ি আনা হতো। এতে প্রতিটি ঝুঁড়ির পেছনে ব্যয় হতো ১৫০ টাকা। এখন সরকার দেশে এসব ঝুঁড়ি তৈরির ব্যবস্থা করার কারণে মাত্র ৫০/৬০ টাকায় ঝুঁড়ি পাচ্ছে চাষিরা।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বজলুর রহমান জানান, চিংড়ি চাষের চেয়ে কাঁকড়া চাষ অনেকাংশ নিরাপদ। চিংড়ি সহজে ভাইরাস আক্রান্ত হয়। চিংড়ি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাঁকড়া। কারণ কাঁকড়া ভাইরাস বহনকারী প্রাণি। যা চিংড়ির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কাঁকড়া নিজেই ভাইরাস বহন করে বলে তারা অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয়না। এ কারণে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কাঁকড়া চাষ।
বজলুর জানান, জেলায় ৭৮০জন কাঁকড়া চাষি তালিকাভূক্ত হয়েছেন। এর বাইরে আরও ৫শতাধিক ব্যক্তি কাঁকড়া চাষ করছেন। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, হংকং ও সিঙ্গাপুরে কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নিয়মিত প্রায় ২০টিরও বেশি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হতো। এখন তা বেড়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মার্কিন ডলার। ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। এরপর রপ্তানি বন্ধ থাকে প্রায় ৩ বছর। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবার বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি আয়ও বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে ইপিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি কাঁকড়ার চাহিদা রয়েছে। তবে, কাঁকড়ার চাষটা ঠিকমতো হচ্ছে না। যদি এর পরিধি আরও বাড়ানো যায় তা হলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। অধিকাংশই সীমিত চাষে উৎপাদিত স্থানীয় বা প্রাকৃতিক কাঁকড়া রপ্তানি করা হচ্ছে।
মৎস্য গবেষণা ইউনিস্টিটিউট কক্সবাজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান জানান, প্রথম ২০০৩ সালে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন ও চাষ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রে ২০১৩ সালে সফলভাবে কাঁকড়া পোনা উৎপাদন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এতে কাঁকড়া চাষিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ চাষ ছড়িয়ে দেয়া হয় জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া চাষিদের মাঝে।
মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের কাঁকড়াচাষি দিলীপ শীল জানান, ১৯৯০ সাল থেকে কাঁকড়া ব্যবসায়ী হিসাবে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ক্াঁকড়া চাষে ও সফল হন দিলীপ শীল।
কক্সবাজার জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীরা নানা প্রতিকূল পরিবেশে এখনো ঠিকে আছে। নেই কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন বাড়াতে হবে চাষের পরিধি ও অনুকূল পরিবেশ।