বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ও অন্যান্য ডিগ্রি অর্জনকারী প্যালেস্টাইন ও জর্ডানের নাগরিকদের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি। সম্প্রতি জর্ডানের আম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ও অন্যান্য উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা প্যালেস্টাইন ও জর্ডানের ডাক্তারদের সন্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভিডিও বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর শিক্ষাখাতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্যালেস্টাইনের ছাত্রদের নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ দিয়ে থাকে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এসকল শিক্ষার্থীগণ বিশ্বের অন্যান্য দেশে উন্নত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরবেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময়ই প্যালেস্টাইন ইস্যুতে এবং জর্ডানের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করে আসছে। ১৯৭১ সালে নয়মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। প্রায় দুশো বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে অবশেষে আমরা মুক্তি পেয়েছি। সেজন্য একটা অধিকৃত দেশ ও জাতির কষ্ট ও দুর্দশা আমরা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে প্রদত্ত তাঁর প্রথম ভাষণে প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তারপূর্বেও ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরবদের সমর্থন করেন এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য চিকিৎসকদল প্রেরণ করেন।
তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্যালেস্টাইন ও জর্ডানের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের কারনে আপনারা অন্য অনেক দেশের নাগরিকদের তুলনায় বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানার সুযোগ পেয়েছেন। আপনারা আপনাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বাংলাদেশে অতিবাহিত করেছেন। সেজন্য আমরা আপনাদের প্রকৃত বন্ধু বিবেচনা করি এবং বিশ্বাস করি আপনারা আমাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্যালেস্টিাইন ও জর্ডানের সাথে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশই তাদের স্বল্প সম্পদ ও সীমিত ব্যবস্থাপনা স্বত্বেও বিশ্ব দরবারে নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে। ভ্রাতৃপ্রতিম এই দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য, প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের “রোল মডেল” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করা সকলকে বাংলাদেশের প্রকৃত ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান ।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা জর্ডানের পেশাজীবীগণ বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে তাদের সুখ স্মৃতি রোমন্থন করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশকে কাছ থেকে দেখতে পারা তাদের জন্য এক বিরল সৌভাগ্য। বাংলাদেশের মানুষের প্রাণ-প্রাচুর্য ও আতিথেয়তার অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য এক স্মরণীয় স্মৃতি। প্রায় তিন যুগ পর সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে আসা ডাক্তার ইউসুফ বলেন, আগামীর ভবিষ্যৎ কেবল বাংলাদেশের। তিনি বিগত দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ একটি সফল সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বক্তাগণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক তাঁদের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে উল্লেখ করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সংবর্ধনা আয়োজনের উদ্যোগের জন্য দূতাবাসের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণের লক্ষ্যে জনকূটনীতির অংশ হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ভিডিও চিত্রপ্রদর্শন করা হয়।