- চাল সংগ্রহ আংশিক, ধানে ব্যর্থ
- শাহজাদপুর উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে আংশিক সফলতা এলেও ব্যর্থ হয়েছে ধান সংগ্রহে। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৯ শতাংশের কম ধান সংগ্রহ হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২৬৯ টন ধান ক্রয় করতে পেরেছে উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদাম। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৬ শতাংশ চাল সংগ্রহ করেছে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর। তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলামের দাবি, গুদাম ও খোলাবাজারে ধানের দাম কাছাকাছি হওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে কৃষকদের আগ্রহ নেই। যে কারণে কৃষকরা এবার সরকারি গুদামে ধান বিক্রি না করে খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন।
বিগত কয়েক বছর যাবৎ সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম বলেন, শুধু দরদামের তারতম্যের জন্য ধান সংগ্রহ আশানুরূপ হয়নি। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ধানের বাজার মূল্য অনেক বেশি। এবারও ধানের বাজার মূল্য বেশি থাকায় সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে আগ্রহী হচ্ছে না কৃষক।
শাহজাদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রমতে, এ মৌসুমে ১ মে থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৪০ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। উপজেলায় এবারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭ টন। সংগৃহ হয়েছে মাত্র ২৬৯ টন। শতাংশের হিসাবে মাত্র ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অপরদিকে ১৫টি মিলার এর মাধ্যমে সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৪৩ টন। এর মধ্যে সংগৃহীত হয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ দশমিক ৫৬০ টন। সেদ্ধ চালের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে প্রায় ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।
উপজেলার গ্রামীণ হাটবাজার ও বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, এবারের মৌসুমে শুরুর দিকে কাচা ধান মণপ্রতি ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও গত দুই মাসে তা ১২০০ থেকে ১৩৫০ টাকার ওপরেই বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য ধানের বর্তমান বাজারদরকেই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ধান-চাল ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে মিলাররা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে ধানের দাম ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা চাল দিতে পারেননি। এদিকে ব্যবসায়ী ও মিলারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও ধানচাষিরা উপযুক্ত দাম পেয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুদাম ও খোলাবাজারে ধানের দাম কাছাকাছি হওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে কৃষকদের আগ্রহ নেই। এ ছাড়াও আর্দ্রতার কথা বলে অনেক সময় ধান ফেরতও দেওয়া হয় কৃষকদের। স্থানীয় বাজারে এসব ঝক্কি-ঝামেলা নেই। এসব কারণে কৃষকেরা বাজারে বিক্রি করেছেন।
চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহে কাংক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কেন সম্ভব হলো না, জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তুলনায় গ্রামের হাটবাজারে কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন, তাই সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে তাঁদের আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রেডিং, শুষ্কতা, পরিবহন খরচ, মজুরি খরচের হিসাব বিবেচনা করে কৃষকেরা বাড়ি থেকে পাইকারের কাছে অথবা পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করাকেই সুবিধাজনক মনে করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা কেন পূরণ হলো না এ সম্পর্কে তিনি জানান, চাল সংগ্রহের জন্য উপজেলায় ১৫ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি ছিল, সে অনুযায়ী তারা সময়মতো চাল সরবরাহ করার কথা থাকলেও হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা গুদামে চাল দেয়নি। চুক্তি অনুযায়ী যারা চাল সরবরাহ করেনি তাদের জামানত বাতিল হবে বলেও জানান তিনি।
আনন্দবাজার/শহক