টানা ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করছেন ইসমাইল। কিশোর থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সাইকেলের প্যাডেল মেরে মেরে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন খবরের কাগজ। এ ৪০ বছরে অনেক কিছুরই বদল হয়েছে কিন্তু বদল হয়নি ইসমাইলের এ পেশাটি। পেশা যখন নেশায় রূপান্তর হয় তখন তাকে ছাড়া কঠিনই হয়ে পড়ে। তার প্রতিদিনকার সকাল কাটে পত্রিকার তাজা গন্ধে। পত্রিকা যেন তার অস্থিত্বের সাথে মিশে গেছে। এই চার দশকে বহু হকার আসছে গেছে কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আছেন ইসমাইল।
হকার ইসমাইলের কর্মস্থল চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। পাশ্ববর্তী উপজেলা রায়পুরে তার বাড়ি। ৬৩ বছর বয়সের ইসমাইল প্রতিদিন রায়পুর থেকে এসে এখানে পত্রিকা বিক্রি করেন। প্রায় ৪০ বছর যাবৎ পত্রিকা বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই কাটছে তার সংসার। সাদাসিধে এ মানুষটির কোনো বাড়তি চাওয়া পাওয়া নেই। অর্থ সম্পদ গড়ার ভাসনায় নেই বলে টগবগে যৌবনে তিনি অন্য কোন পেশায় যায়নি। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে পাঠকের হাতে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা বিক্রি শেষে প্রতিদিন বিকেলে ক্লান্ত দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেন।
হকার ইসমাইল জানায়, এখন আর আগের মতো পত্রিকা বিক্রি হয় না। কম বিক্রির কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় এক পেশে রিপোর্ট ও মানুষের হাতে থাকা মোবাইলে সবাই দিনের খবর দিনেই পায়। তাই আগের মতো পত্রিকা বিক্রি হয় না। তবে কয়েকটি পত্রিকায় ভিন্ন স্বাদ ও আমেজের রিপোর্ট থাকায় হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকার নির্দিষ্ট কিছু পাঠক সব সময়ই ছিলো এবং আছে। ওই পত্রিকাগুলো বিক্রি করতে কোন বেগ পেতে হয় না।’
হকার ইসমাইলের গ্রামের বাড়ি পাশবর্তী লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার কেরোয়া গ্রামে। তার পিতা- মহিম আলী। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ২৫ বছর বয়স থেকে তিনি পত্রিকা বিক্রি করেন। ফরিদগঞ্জে সবার কাছে তিনি অতি পরিচিত মুখ। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নে পত্রিকা বিক্রির জন্য এক সময়ে হকার ছিল ৭ জন। একমাত্র ইসমাইল ছাড়া সবাই চলে গেছেন অন্য পেশায়।
৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে ইসমাইল ছিল সবার বড়। স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। সংগ্রামী এই মানুষটি তার বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠান। বিদেশ যাওয়ার আগে সেও কয়েক বছর পত্রিকা বিক্রি করেছে। সে জানায় ‘প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার ইনকাম থাকে ৪/৫ শ টাকা।