কোনো সমস্যাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম সামনে। নিজের উদ্যম আর ইচ্ছা শক্তি নিজের প্রতিবন্ধী দশাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখেননি। এখন তিনি তার কর্মদক্ষতায় এলাকায় সুপরিচিতি লাভ করেছেন একজন সাইফুল কামার হিসেবে। সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার এই দুইদিন স্থানীয় কাশিনাথপুর হাটের খোলা জায়গায় অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসে পড়েন প্রতিবন্ধী সাইফুল কামার। শারিরীক অক্ষমতাকে জয় করে দিব্যি ২ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার পরিচালনা করছেন। এ যেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক বীরের গল্প।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম (সাইফুল কামার) সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বনগ্রাম দক্ষিণপাড়ার মৃত শামছুল মোল্লার ছেলে। এবং দুই সন্তানের জনক। তার বড় ছেলের নাম রাজু (১২) বর্তমানে ২য় শ্রেণীর ছাত্র ও ছোট ছেলের নাম হোসেন(৯) সে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। সংসার চালাতে গিয়ে ছেলেদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটলেও বন্ধ হয়ে যায়নি। তারা পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী বাবার কাজেও সহযোগীতা করে থাকে।
তবে গ্রামের রাস্তা ভালো না হওয়ায় প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম ও তার সন্তানদের তৈরী করা কৃষি সরঞ্জাম হাটবাজার পর্যন্ত নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট করতে হয়। বাড়ি থেকে নামার সময়ই তাদের যুদ্ধ শুরু, বাড়ি থেকে চলাচলার রাস্তাটি হলো খালের মতো (হালট)। পরে একটি ঠেলা গাড়িতে তৈরি করা সরঞ্জাম নিয়ে বসে পড়েন প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম। আর তার দুই ছেলে বাবার ঠেলাগাড়িটি ঠেলতে থাকেন। এভাবে প্রায় ২ কিলোমিটার কাঁদাযুক্ত হালটের রাস্তা অতিক্রম করে যেতে হয়ে স্থানীয় কাশিনাথপুর হাটে। সপ্তাহে হাটের দুইদিন খোলা জায়গায় অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসে পড়েন পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মাতো থাকে দুই ছেলে রাজু ও হোসেন। এভাবেই সারাদিন থাকার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে একইভাবে বাবার ঠেলাগাড়ি টেনে বাড়িতে ফেরেন।
এলাকাবাসী ও সাইফুল কামার এর সাথে কথা বলে জানা যায়, জন্মসূত্রে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেন সাইফুল ইসলাম, শিশুকালেই পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার চেষ্টা করা হলেও সুস্থ্য হননি তিনি। বড় হওয়ার সাথে সাথে পিতার কামারের পেশায় দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি, বাড়িতেই গড়ে তোলেন ছোট একটি কারখানা। সেখানে তিনি বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন এবং তার পিতা হাটবাজার ও পাড়া মহল্লায় গিয়ে বিক্রি করতেন। এই কামারের পেশা থেকেই তিনি উপার্জন করে দুই বোনকে পড়ালেখা করিয়েছেন এবং তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করেছেন।
জীবন যুদ্ধের এই সাহসী যোদ্ধার বয়সের ভারে আর এতো পরিশ্রম করতে পার না, তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চেয়েছেন। যেন তিনি, স্থানীয় কাশিনাথপুর হাটসহ আশে পাশের হাটে যাওয়ার জন্য একটি ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ি কিনতে চান যেন তার ছেলেদের ঠেলে তাকে হাটে নিয়ে যেতে না হয়। এবং তিনিও প্রতিটি দিন তার তৈরিকৃত জিনিসগুলো বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে পারবেন বলে স্বপ্ন দেখছেন।