ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডলারে সয়াবিনের বাগড়া

ডলারে সয়াবিনের বাগড়া

বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে ৭ টাকা বৃদ্ধি

ডলার বাজারে ফিরতে শুরু করেছে স্বস্তি। টাকার কাছে মান হারিয়ে প্রতিনিয়তই নিস্তেজ হয়ে পড়ছে বৈদেশিক এই মুদ্রা। কয়েকদিনের ব্যবধানে দাম কমেছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ১২০ টাকার ডলার এখন খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায়। সংশ্লিষ্টদের আশা, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম চলে আসতে পারে ১০০ টাকার নিচে। ডলারে যখন ফিরতে শুরু করেছে এমন সস্থি, কাটতে শুরু করেছে অস্থিরতা ঠিক তখনই তেজ দেখাচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে লিটারে দাম বাড়ানো হলো আরো ৭ টাকা।

মহামারি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মহাসংকটে বৈশ্বিক অর্থনীতি। যার ধাক্কা লেগেছে দেশে। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতির বোঝায় চেপে আসে ডলার সংকট। এরমধ্যে কমে আসে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। সবমিলিয়ে বড় সংকটে পড়ে ডলারের বাজার। সংকট কাটাতে কৃচ্ছ্রতায় মনোযোগী হয় সরকার। উদ্যোগ নেয়া হয় আমদানি ব্যায় কমানোর। তবে কয়েকটি ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জের কারসাজিতে অস্থিরতা বিরাজ করে খোলা বাজারো। ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১২০ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকটি উদ্যোগের হাত ধরে শক্তিশালী হচ্ছে টাকা। কমছে ডলারের চাহিদা। ব্যাংকাররা বলছেন, টাকার সুদিন আসতে আর বেশি দেরি নেই। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতি ডলারের দাম নামতে পারে ১০০ টাকায়।

এদিকে, সয়াবিন তেলেরে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, এখন থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৭ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হবে ১৯২ টাকায়। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকা এবং পাম সুপার অয়েল ১৪৫ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হবে ৯৪৫ টাকায়।

এর আগে গত ১১ আগস্ট সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে কিন্তু আমাদের দেশে ডলারের দামটা বেড়ে গেছে। তাই যে সুফলটা পাওয়ার কথা, সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন ডলারের বাজার স্থিতিশীল হলেও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে বাণিজ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে একাধকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

দাম বাঁড়ানোর বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণে আমরা লিটারে দাম ২০ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৯ টাকা ও বোতলের সয়াবিন তেল লিটারে ৭ টাকা করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়েছিল।

নিয়ম অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে বা সমন্বয় করতে কোম্পানিগুলো ট্যারিফ কমিশনকে প্রস্তাব দেয়। এরপর কমিশন তা পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত হয় তেলের মূল্য। দেশে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির পর পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। কেউ কেউ সয়াবিন বীজ আমদানি করে তেল উৎপাদন করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন