ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রপ্তানি বাণিজ্যে চমক

রপ্তানি বাণিজ্যে চমক

সাগরপথে সরাসরি চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে কনটেইনার পরিবহন আগের চেয়ে বেড়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার বন্দরের জটিলতার কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে সরাসরি এ সার্ভিস। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গত তিন মাসে প্রায় ১২ হাজার টিইইউএস পণ্য বোঝাই কনটেইনার সরাসরি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। তবে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোর জটিলতা কাটলে সাগরপথে সরাসরি এই সার্ভিস টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা।

বন্দর সূত্রমতে, দেশের তৈরি পোশাকের বড় আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ইউরোপ। আগে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইউরোপে পণ্য পাঠানোর মতো কোনো উপায় ছিল না। পণ্য বোঝাই কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা বা মালয়েশিয়ায় যেত। তারপর সেখানকার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট থেকে সেসব কনটেইনার ইউরোপ, আমেরিকাগামী বড় বড় মাদার ভ্যাসেলে বোঝাই করা হতো। তবে করোনাকালসহ নানা কারণে বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরেই সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকার কলম্বো ও পোর্ট কেলাং বন্দরে বড় জাহাজজট তৈরি হয়েছে।

এমন জটিল পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম থেকে কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আর শ্রীলঙ্কার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে গিয়ে ইউরোপগামী জাহাজে স্থান পেতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছিল। একেকটি মাদার ভ্যাসেলকে গড়ে ১০-১৫ দিনের জটে পড়ে অলস সময় ব্যয় করতে হচ্ছিল। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম থেকে যেখানে কনটেনাইর পৌঁছতে ২২-২৩ দিন লাগতো, শুধু এমন জটিলতার কারণে সেখানে ইউরোপে কনটেইনার পৌঁছাতে গড়ে লেগে যাচ্ছিল ৪৫ থেকে ৫০ দিন করে। এতে ইউরোপের আমদানিকারকদের ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম সংকট দেখা দেয়।

এদিকে এমন দুরাবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য ইউরোপের বড় বড় কয়েকটি তৈরি পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান একাধিক ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় চট্টগ্রাম-ইউরোপ সরাসরি শিপিং লাইন চালু করার উদ্যোগ নেয়। শুরুতে চট্টগ্রাম থেকে ইতালির একটি রুটের সূচনা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালির রাভেনা বন্দরে জাহাজ চলাচল শুরু করার পর ইউরোপের অনেক আমদানিকারকের শেষ রক্ষা হয়।

নতুন এই উদ্যোগ নেয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ইতালিতে মাত্র ১৮ দিনে পণ্য বোঝাই কনটেইনার পৌঁছাতে শুরু করে। অথচ এর আগে সময় লাগতো প্রায় ৫০ দিন। নতুন এই উদ্যোগের ফলে সময় বেচে যায় অন্তত ৩০-৩২ দিন। আর ইউরোপে সরাসরি কনটেইনার বাহী জাহাজ চলাচলের সাফল্যে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের মোড় নেয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী হয়ে সরাসরি শিপ পরিচালনায় এগিয়ে আসেন।

জানতে চাইলে ইতালি রুটের লাইন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের রিলায়েন্স শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, ইতোমধ্যে এই রুটে দশ হাজার টিইইউএসের বেশি কনটেইনার পরিবহন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ইতালিতে নিয়মিত পণ্য পরিবাহিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে সাগরপথে সরাসরি ইউরোপ নৌরুট বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শুধু জাহাজ ভাড়া নয়, এই ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে সময়টা বড় বিষয়। পণ্য পরিবহনের সময়কাল অর্ধেকে নেমে আসার বিষয়টি রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম ও ইংল্যান্ডের লিভারপুল রুটে পণ্য পরিবহনে দেখভাল করছে ফনিং শিপিং। অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ দিয়ে লাইনটি পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আগে সময় লাগত ৪৫ থেকে ৫০ দিন। এখন সেখানে ২৩ দিনেই পণ্য যাচ্ছে। মাস তিনেকের মধ্যে এই রুটে দুই হাজার টিইইউএস কনটেইনার পরিবাহিত হয়েছে।

ফনিং শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত বলেন, ২২ মে থেকে আমরা ইউরোপে সরাসরি জাহাজ পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করি। ইতোমধ্যে ২ হাজার টিইইউএস কনটেইনার পাঠিয়েছি। আমাদের টার্গেট ছিল মাসে তিনটি জাহাজ পরিচালনা করা। তবে কিছু সমস্যার কারণে তা হচ্ছে না। গত সোমবার একটি জাহাজ ৪শ টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে যাত্রা করেছে। আগামী ২৯ আগস্ট আরও একটি জাহাজ আসবে। প্রতিমাসে চট্টগ্রাম থেকে দুটি ট্রিপ দেয়া সম্ভব হলে সবার জন্য সুবিধা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন