ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সামাজিক বনায়নের গাছ হরিলুট

সামাজিক বনায়নের গাছ হরিলুট
  • কমলগঞ্জে বাগানের মেয়াদ পূর্ণ হলেও কোনো পদক্ষেপ নেই বন বিভাগের

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাজকান্দি রেঞ্জের আওতাভুক্ত সামাজিক বনায়নের অধিকাংশ বাগানের মেয়াদ দীর্ঘদিন আগে পূর্ণ হলেও অদৃশ্য কারণে বন বিভাগ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার কামারছড়া বনবিট, আদমপুর বনবিট ও রাজকান্দি রেঞ্জ সদরের শত শত হেক্টর আগর বাগান ও কৃষি বন বাগান থেকে রাতের আধারে অবাধে গাছ চুরি করে নিচ্ছে চোরচক্র। সামাজিক বনায়নের গাছ চুরি কিংবা মেয়াদ পূর্ণের বিষয়ে বন বিভাগ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অভিযোগের তীর বন বিভাগের দিকে। সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, রাজকান্দি রেঞ্জের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই চলছে সামাজিক বনায়নের মূল্যবান গাছ নিধন।

এছাড়া রাজকান্দি রেঞ্জের এসব বাগানের মেয়াদ পূর্ণ হলেও বন বিভাগের অসহযোগীতায় যথা সময়ে নিলামে যাচ্ছে না বাগানগুলো। বাগানের গাছগুলো সঠিক সময়ে নিলামে না তোলায় বাগানের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত চকিদারদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাগানের অংশিধাররা, কিছু কিছু বাগানে চকিদারদের বেতন যোগাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত চকিদারদের বাদ দিয়ে দিতে হয়েছে।

সামাজিক বনায়নের কয়েকটি বাগানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুর বনবিট এলাকায় সৃজিত আগর বাগান ২০০১ সাল থেকে ২০ বছর মেয়াদে ২০২১ সালে মেয়াদ পূর্ণ হয়। কামারছড়া বনবিট এলাকায় কৃষি বন বাগান ২০০৮ সাল থেকে ১০ বছর মেয়াদে ২০১৮ সালে মেয়াদ পূর্ণ হয়। কামারছড়া বনবিট এলাকায় সৃজিত আগর বাগনে একই মেয়াদে ২০১৮ সালে মেয়াদ পূর্ণ হয়। ২০১০ ও ২০১১ সালে রাজকান্দি রেঞ্জ সদরের সিলেট রেলপথে সৃজিত রেল বন বাগানের মেয়াদ যথাক্রমে ২০২০ ও ২০২১ সালে পূর্ণ হয়।

সামাজিক বনায়নের সৃজিত বাগানের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কামারছড়া ও আদমপুর বনবিটের অধিকাংশ বাগানের মেয়াদ অনেক আগেই পূর্ণ হয়েছে। এসব বাগানের মেয়াদ পূর্ণ হলেও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করলেও গাছ মার্কিং কিংবা নিলামের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বন বিভাগ। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আলোর মুখ দেখছেন না অংশিধাররা। এতে অনেকটাই নিরাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। বাগানের সুবিধাভোগীদের ৯৫ ভাগই মধ্যবৃত্ত ও নিন্মমধ্যবৃত্ত। লাভের আশায় পেটে লাথি দিয়ে বাগানের খরচ জুগিয়েছেন। কয়েকটি বাগানে দীর্ঘ মেয়াদে চকিদারদের বেতন জোগাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত চকিদারদের বাদ দিয়ে দিতে হয়েছে। রাতের আধারে সামাজিক বনায়নের মূল্যবান গাছকেটে নিচ্ছে চোরচক্র। সম্প্রতি রাজকান্দি রেঞ্জ সদরের সিলেট রেলপথের রেল বন বাগানের বেশ কয়েকটি গাছ কেটে নিয়ে যায় চোরচক্র।  দ্রুত বাগানগুলোর গাছ মার্কিং করে নিলামের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সামজিক বনায়নের বাগান ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার রাজকান্দি রেঞ্জের আওতাভুক্ত কামারছড়া ও আদমপুর বনবিটের শত শত হেক্টর সামাজিক বনায়নের বাগান থেকে ঘন ঘন গাছ চুরি হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই আগর ও কৃষি বন বাগান। আদমপুর বনবিটের আগর বাগানে শত শত আগর গাছের মোথা পড়ে রয়েছে।

আদমপুর সামাজিক বনায়নের সুবিধাভোগী সবুর মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন মুন্না (রানা), মো: আব্দুল হাই তোতা, আব্দুল আহাদ অভিযোগ করে বলেন, বাগানের মেয়াদ পূর্ণ হলেও বন বিভাগ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। শুধু কালক্ষেপন করছে। ২০১৮ সালে বাগানের মেয়াদ পূর্তির আগেই আদমপুর বনবিটের তৎকালিন বিটকর্মকর্তা আব্দুল আহাদ গাছ মার্কিং এর জন্য সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা নেন। কিন্তু মার্কিং হলেও তৎকালিন বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক মার্কিং সঠিক না হওয়ার অজুহাত দিয়ে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে দেন রাজকান্দি রেঞ্জে। এর পর চার বছর গত হলেও আলোর মুখ দেখে নি। এ সুযোগে মাথাচড়া দিয়েছে চোরচক্র। রাজকান্দি রেঞ্জের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রাতের আঁধারে চলছে এ বনায়নের মূল্যবান গাছ নিধনের মহোৎসব। গত ২ এপ্রিল আদমপুর আগর বাগান থেকে চুরি হওয়া ২৬ ঘনফুট আগর কাঠসহ ৩ জনকে আটক করে বন বিভাগ। তারা আরও বলেন, সময়মত টেন্ডার প্রক্রিয়া না হওয়ায় সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, আর অংশিদাররা পাচ্ছে না তাদের কষ্টাজ্জিত অর্থ। এদিকে লাভবান হচ্ছে চোরচক্র ও একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারি। গাছ মার্কিং ও নিলামের বিষয়ে রাজকান্দি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এর সাথে একাধিকবার আলাপ করলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে শুধু সময়ক্ষেপন করছেন। বন বিভাগ বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ নিলামে তুলে সুবিধাভোগীদের অর্থ হস্তান্তর করার দাবি জানান তারা।

 আদমপুর বনবিট কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, আগর বাগানের মেয়াদ পূর্ণের বিষয়টি নজরে আছে। বাগান থেকে প্রায়ই গাছ চুরি হচ্ছে। আমরা গাছ চুরি প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। ডিএফও ও রেঞ্জার স্যারের সাথে বাগানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।

বাগানের মেয়াদ পূর্ণের বিষয়ে সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক তৌফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি রাজকান্দি রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করবো।

রাজকান্দি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এখন ব্যস্ত আছি। কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা বন কমিটির সভা ডেকে বিষয়টি উপস্থাপন করব।

সংবাদটি শেয়ার করুন