ফের শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হবিগঞ্জ
ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বসবেন। তখন দাবি-দাওয়া জানানো হবে: নৃপেন পাল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন
দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানের শ্রমিকরা ১৩তম দিনের কর্মবিরতি পালন করছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদিশপুর পয়েন্ট মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে দাবি আদায়ে অনড় ভূমিকায় থাকা শ্রমিকরা দুপুর পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন বলে জানান। চা শ্রমিকরা বলছেন, ‘দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
এদিকে, গত শনিবার রাতে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় তিনি চা-শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ জানান। চা-শ্রমিক নেতারা জেলা প্রশাসককে আশ্বস্ত করেন কর্মবিরতি চালিয়ে গেলেও তারা রাস্তায় এসে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না। তবে তাদের মতবিনিময় সভায় লস্করপুর ভ্যালির কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। শুধু বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন বাগানের কয়েকজন শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাহুবল-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি, সহকারী পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরী, চুনারুঘাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক, বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া শারমিন ফাতেমাসহ সাংবাদিকবৃন্দ।
এর আগে দফায় দফায় বৈঠক আর টানা ১২দিন কর্মবিরতির পর গত শনিবার বিকেলে শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ১৪৫ টাকা মজুরির আশ্বাস দিলে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক নেতারা। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। এতে তারা দ্বিমত প্রকাশ করেন।
নেতাদের সেই সিদ্ধান্তের পর শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তারা। এ সময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শ্রমিকরা।
লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনুরুদ্ধ বাড়াইক বলেন, ‘চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ১৪৫ টাকা মজুরিতে স্বাক্ষর করেছে। আমরা এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করছি’।
চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস দেয়া হলে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে আমাদের দাবিগুলো তাকে জানানো হবে’।