পাটের ভরা মৌসুমে বগুড়ার হাটবাজারগুলোতে পাটের সরবরাহ ভালো থাকলেও ফলন এবং দাম নিয়ে হতাশা কাটছে না চাষিদের। পাটকলগুলিতে পাট বিক্রির পর বছরের পর বছর ধরে টাকা না পাওয়ায় ব্যাপারিরা পাট কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পাট বিক্রি করে দুশ্চিন্তায় থাকছেন তারা।
গত শনিবার সকালে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পাটের হাটে গিয়ে দেখা গেছে চরাঞ্চলের পাটচাষিরা ভ্যান ভর্তি পাট এনে বাজারে বিক্রি করছেন। রকম এবং মান ভেদে তোষা পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭শত থেকে ৩ হাজার ২ শ টাকায়। সাদা বা দেশি পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শ টাকায়।
সারিয়াকান্দি উপজেলার মানিক দায়ির চরের জয়নাল মিয়া জানান, গত বন্যায় তার ৩ বিঘা জমির পাট নষ্ট হওয়ার পর ২ বিঘা জমিতে পাট পেয়েছেন মাত্র ১১ মণ। ২ হাজার ৫ শ করে পাট বিক্রি করে এ বছর পাট চাষ করতে গিয়ে লোকসান গুনেছেন ৭ হাজার টাকা। একইভাবে ধারাবর্ষা চরে সুজন মাঝি জানান, ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে বিক্রির পর তার লাভ টিকেছে মাত্র ১ হাজার টাকা।
সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর গ্রামের রফিক মিয়া জানান, এবার পাটের ফলন কম হওয়ায় এবং পাট পচানোর পানি না পাওয়ায় পাট নিয়ে অনেক অসুবিধা পোহাতে হয়েছে তার। পাট চাষ করে তুলনামূলক লাভ টেকেনি তার।
সারিয়াকান্দি হাটের পাটের ব্যাপারি রাকিব হাসান জানান, সরকারি পাটকলগুলি বন্ধ হওয়ার পর বেসরকারি পাটকলের মালিকদের মর্জিমতো পাট কিনতে হচ্ছে। কখনো তার বাজারে কেনা দামের চেয়েও কম দামে পাট বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন মিলগুলোতে। আবারো মিলগুলোতে পাট বিক্রির পর কয়েকদিন পর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও এক বছরেও টাকা মিলছে না। এভাবে পাটের কেনাবেচা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে কৃষকরা এবার মোটামুটি ভাল দামই পাট বিক্রি করতে পাচ্ছেন।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের তথ্যমতে জেলায় এবার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধাপরন করা হয়েছিল প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে বন্যা খড়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরন নাও হতে পারে।
বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধুনট উপজেলায় সবচেয়ে বেশী পাটের আবাদ হয়ে থাকে তবে এবার বন্যার কারনে নদীর তীরবর্তী পাটক্ষেতগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকে ঘরে পাট তুলতে পারেন নি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় পাট চাষে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৭ হাজার ১০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৬২০ হেক্টর পাটের জমিতে প্রায় ৩৪ হাজার মণ পাটের আঁশ নষ্ট হয়। প্রতি মণ ৩ হাজার টাকা করে ধরলে বর্তমান বাজার অনুযায়ী এই পাটের মূল্য আসে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
বগুড়া জেলায় উৎপাদিত পাট জেলায় ১৪টি পাটকলের চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলার পাটকলগুলিতে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে জেলার ১৪টি পাটকলের মধ্যে পুঁজি হারিয়ে এখন যে ১০টি পাটকল চালু রয়েছে সেগুলিতে শুধু চটের বস্তা সূতলী চটের ম্যাট তৈরি হয়ে থাকে। পাটকলগুলির সূত্রে জানা যায় বগুড়ায় প্রায় ৫০ হাজার টন পাটের চাহিদা রয়েছে।
পাটের কারখানাা ও সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের প্রধান অর্থকরি ফসল পাটের আবাদ যেমন কমছে তেমনিভাবে কারখানার বিদ্যুৎ, শ্রমিক, যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি হওয়ায় কারখানগুলি টিকিয়ে রাখা দায় হয়েছে। তাছাড়া উন্নত জাতের পাটবীজ উদ্ভাবন না হওয়ায় পাটের ফলন বাড়ছে না। তাই কৃষকরাও পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান মিল মালিক ও কৃষক নেতাদের।