- কমপক্ষে ২০০ টাকা না হলে আন্দোলন চলবে
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন মজুরি নির্ধারণের পর চা শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বেঁকে বসেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা কমপক্ষে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরির সিদ্ধান্ত না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে ১৪৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে বৈঠক শেষ হয়।
এর আগে দুপুরে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। অপরদিকে, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দেরর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ও বিভিন্ন ভ্যালির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
বৈঠক শেষে বিকেলে নিপেন পাল জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খোদ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে ফিরে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ সময় তাদের দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করবেন। এই আশ্বাসে তারা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। আজ রবিবার থেকে সব বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে।
কিন্তু নেতাদের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেননি সাধারণ চা শ্রমিকরা। বৈঠকের পরপরই শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরের সামনেই স্থানীয় চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ারও কথা জানান তারা। এসময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ জানান সাধারণ শ্রমিকরা।
অপরদিকে, বৈঠকের পর সিলেটের চা বাগানগুলোর শ্রমিকরাও এ সিদ্ধান্তকে বয়কট করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় মহানগরীর মালনিছড়া চা বাগানের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শ্রমিকরা।
এসময় মিছিলে উপস্থিত থাকা চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায় দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন- আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। নেতারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তারা অন্তত ২০০ টাকা মজুরি ছাড়া মানবেন না বলে আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও ১৪৫ টাকার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। আমরা এ সিদ্ধান্ত বয়কট করছি, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন সারা দেশের চা বাগানের শ্রমিকরা। প্রথম তিন দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের পর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত কাটছে না চা শিল্পের অচলাবস্থা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করায় প্রতিদিন অন্ততঃ ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখ চা শিল্প।
আনন্দবাজার/শহক