জনগণের প্রবল বাধার মুখে প্রবেশ ফি দিয়ে পতেঙ্গা সৈকতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর ফলে উন্মুক্তই থাকছে নগরীর পতেঙ্গার সাত কিলোমিটারের মূল পয়েন্টের সমুদ্র সৈকত। অবশ্য প্রবেশ ফি না থাকলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সৌন্দর্য্য রক্ষায় বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, এ সৈকতে কিছু করতে হলে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনার মাধ্যমেই করতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশে পর্যটন জোন করে প্রবেশ ফি নির্ধারণের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রচারের পর এর বিরোধিতা করে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সিডিএ’র এমন সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করে।
এর প্রেক্ষিতেই সিডিএ নতুন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। যদিও সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর পতেঙ্গাকে ঘিরে ব্যাপক যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই টিকিট কেটে পতেঙ্গা সৈকতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে সিডিএ।
জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা পতেঙ্গার কিছু অংশকে বেসরকারিভাবে টেন্ডারে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। যারা সেখানকার বিদ্যুৎ বিল প্রদান করবে, ওয়াশরুম নির্মাণ করবে, চেঞ্জিং রুমসহ পতেঙ্গা বিচ এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে। কিন্তু পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। তাই আমরা প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেই রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য বেসরকারি খাতকে টেন্ডারের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে। তারা সেখান থেকে আয় করে খরচ মেটাবে।
প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আরো বলেন, প্রথমদিকে সেখানে প্রবেশ ফি নির্ধারণের কথা ভাবলেও এখন আমরা ‘প্রবেশ ফি’ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো এলাকা উন্মুক্ত থাকবে, তবে কিছু অংশে বিভিন্ন রাইড থাকবে। রাইড থেকে যে আয় হবে তা দিয়ে মেইনটেন্যান্স করা হবে। কিন্তু কোন প্রবেশমূল্য লাগবে না। পতেঙ্গা এলাকায় সংরক্ষিত জায়গা রাখার যে পরিকল্পনা করেছি, সেটাও রাখা হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে পতেঙ্গা এলাকায় প্রচুর মানুষের জনসমাগম শুরু হবে।
জানতে চাইলে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, প্রবেশ ফি নির্ধারণ না করে সিডিএ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করি। পতেঙ্গার মত একটি উন্মুক্ত জায়গা সিডিএ চায়লেই প্রবেশ ফি নিতে পারে না, আর প্রবেশ নেয়ার সিডিএ’র সে অধিকারও নেই। তবে সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য সেখানে কিছু করা যেতে পারে। কিন্তু এসব হতে হবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যাতে অবৈধ দখলদারদের হাতে না পরে সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশে পর্যটন জোন করে টেন্ডার আহ্বান করেছে সিডিএ। ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হবে জানায় সিডিএ। এ তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
আনন্দবাজার/শহক