ঢাকা | বুধবার
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রভিশন ঘাটতি প্রকট

প্রভিশন ঘাটতি প্রকট
  • নয় ব্যাংকের ১৮ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা
  • ব্যাংকিং কমিশন গঠনের তাগিদ

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিগত ২০২০ সাল জুড়েই ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা ছিল ব্যবসায়ীদের। এসব সুবিধার কারণে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কাউকে খেলাপি হতে হয়নি। তবে বিশেষ সুবিধা না থাকায় খেলাপি ঋণের অংকটা বেড়েই চলছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকায়। এর মধ্য এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকাই খেলাপি। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশনিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে নয়টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় পুরো ব্যাংকখাতই ঋণমাণ অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। জুন প্রান্তিক শেষে নয় ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। সবমিলে পুরো ব্যাংকখাতের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে একটি ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয়। অর্থাৎ কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ (খেলাপি) ঋণে পরিণত হলে তাতে ব্যাংক যেন আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য প্রভিশন রাখার নিয়ম রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ কমার্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বড় অংকের প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। উল্লেখিত ব্যাংকগুলোর ঘাটতির পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক- বেসিক, অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বেসিক ব্যাংক। জুন শেষে এই ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ৯৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক দুই হাজার ৯৬২ কোটি ১০ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ৬৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঘাটতি নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক।

বেসরকারি ৫ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে ‘বহুল আলোচিত’ ও নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংক। জুন শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি হয়েছে সাত হাজার ১১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এর পরেই রয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এই ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ১৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঘাটতি নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। চতুর্থ স্থানে থাকা সাউথইস্ট ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১০২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন