কলেজছাত্রকে বিয়ে করা আলোচিত-সমালোচিত সেই সহকারি অধ্যাপিকা খায়রুন্নাহার (৪৫) মরদেহ উদ্বার করা হয়েছে। নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাটোরে বলারিপাড়া এলাকার হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চারতলার একটি ফ্লাট থেকে রোববার ভোরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফেসবুকে প্রেম করে কলেজছাত্র মামুনকে বিয়ে করার পর ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা।
নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম আহমেদ বলেন, ধারণা করা হয়েছে খায়রুন্নাহার বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার গলায় দাগ রয়েছে। তার স্বামী মামুন হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মো. রতন, সুজন আলীসহ বেশ কয়েকজন জানান, রোববার ভোরে মামুন ভবনের অন্য বাসিন্দাদের জানান তার স্ত্রী খুবজিপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন্নাহার আত্মহত্যা করেছেন। লোকজন তার বাসায় গিয়ে খায়রুন্নাহারের মরদেহ মেঝেতে শোয়া অবস্থায় দেখতে পায়। তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা মামুনকে বাসার মধ্যে আটকে পুলিশে খবর দেন।
নিহত শিক্ষকার পবিার ও স্বজনদেন সূত্রে জানা যায়, আগের পক্ষের ছেলে বিন্তর (১৮) বাইক বিক্রি করেছিলো মা কলেজ শিক্ষক খায়রুন্নাহার। দ্বিতীয় বিয়ের পর ছেলে তার বাইক কিনতে চান। তখন খায়রুন্নাহার বলে তোমার নানা (খয়ের উদ্দিনের) কাছ থেকে দলিল নিয়ে আসলে বাইক কিনে দেওয়া হবে। পরে ছেলে বাড়ির ৪ শতাংশ জমির দলিল নিয়ে গেলে তার বাইক কিনে না দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। তখন ছেলে আত্মহত্যার কথা বলে বাসা থেকে চলে আসে। তারা আরও জানান, খায়রুন্নাহারের ব্যাংক ও এনজিও থেকে প্রচুর টাকা লোন নেওয়া ছিলো। বর্তমান স্বামী মাঝে মধ্যেই টাকার চাপ দিতো। সে নিয়মিত মাদকসেবন করতো।
চাঁচৗকড় সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মনিরুজ্জামান রাসেল জানান, শুধুমাত্র তার শাখাতেই খায়রুন্নাহারের নামে ১৮ লাখ টাকা লোন নেওয়া আছে। মাত্র কয়েক কিস্তি দিয়েছেন।
খায়রুন্নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার খামারনাচকৈড় মহল্লার খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তার স্বামী মামুন হোসেন একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এর আগে দুই ছেলের জননী খায়রুন্নাহারের ডিভোর্স হয়েছিল আগের স্বামীর সঙ্গে। পরে ছয় মাসের প্রেমের পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে মামুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের ৬ মাস পর গত জুলাই মাসে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়।
খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইদ বলেন, খায়রুন্নাহারের আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমরা মর্মাহত। তাকে নিয়ে সমাজের মানুষ নানা মন্তব্য করেছেন।
তবে হত্যা না আত্মহত্যা নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অসামঞ্জস্য প্রেম ঘটিত ছাত্র-শিক্ষিকার বিয়ের বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন, সামাজিক ও পারিবারিক ভৎসনার কারণেই আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় সিআইডির স্পেশাল টিম তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।