- নান্দনিক ঘরের চাহিদা বাড়ছে
টিন ও কাঠের তৈরী বিভিন্ন ডিজাইনের নান্দনিক ঘর যুগযুগ ধরে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের জনপথের ঐতিহ্যবহন করে আসছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দু’তলা, দেড় তলা, এক তলার চৌচালা কারুকাজ সম্পন্ন এসব টিনের ঘরের খ্যাতি। প্রতিটি বসত বাড়িতেই দেখা মিলবে নজরকারা কাঠ-টিনের তৈরী বিলাশবহুল ঘরের। এসব ঘরের চাহিদা বেশী থাকায় অনেকেই রেডিমেট ঘর বিকিকিনির ব্যবসা করছেন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর, ভাগ্যকুল, কামারগাঁও এলাকায় সারিসারিভাবে রেডিমেট ফিটিংস ঘরের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রেডিমেট এসব ঘর যাচ্ছে ফরিদপুর, দোহার, নবাবগঞ্জ, নারিসাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ এলাকায় ঘরশিল্পের দিকে ঝুঁকছেন মানুষ। ঘর তৈরী কাজে সৃষ্টি হচ্ছে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীনগর-দোহার আন্ত:সড়কের বালাশুর, বটতলা ও কামারগাঁও এলাকায় ঘরের মেলা। খোলা ময়দানে টিন ও কাঠের তৈরী কারুকাজ সম্পন্ন ঝকঝকে সুন্দর ঘর ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়ছে। এ সময় লক্ষ্য করা গেছে, ঘর তৈরীর কাজে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এখানকার ঘর শিল্পে প্রায় অর্ধ শতাধিক কাজ করছেন। ঘর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে উন্নতমানের ঢেউটিন, প্লেনশিট, বিভিন্ন জাতের লোহা কাঠসহ অন্যান্য উপকরণ। আজিজুল মোল্লা বলেন, মহাজনদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ঘর তৈরীর অর্ডার নেন। ২১, ২৩ ও ২৫ বন্ধরের বিভিন্ন ডিজাইনের ঘর তৈরী করা হচ্ছে। একেকটি ঘর তৈরীতে ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক মিলে প্রায় এক মাস লাগছে। এ কাজের ঘর ব্যবসায়ীরা তাদের কাজের মজুরি দেন। তিনি জানান, এখানে লিটন ফকির, শাহ আলম শেখ, মো. শহিদ, মো. দুলাল মিয়া, আনোয়ার শেখসহ বেশ কয়েকজন ঘরের ব্যবসা করছেন। মো. বাবু সারেং বলেন, গত ২৫ বছর ধরে ঘর তৈরীর কাজ করছি। চলতি বছর বেশ কয়েকটি ঘর বিক্রি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ঘরের দাম হাকানো হয় ঘরের উচ্চতা, টিন-কাঠের মান এবং ডিজাইন ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে। এক তলা একটি ঘরের দাম ধরা হয় ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা, দেড় তলা ঘর ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, দু’তলা ঘর বিক্রি করা হয় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। মহাজন ও ক্রেতাদের আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি ঘরের দরদাম নির্ধারণ হয়। এছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ঘর তৈরীর অর্ডার নেওয়া হচ্ছে এখানে। তৈরীকৃত এসব ঘরে নাইজেরিয়ান, সুপার, বাচালু, ওকান ও মিমবাসু নামক লোহা কাঠের ব্যবহার করা হচ্ছে। পাটাতনে দেওয়া হচ্ছে কড়ই, মেহগনিসহ অন্যান্য জাতের কাঠ। বেড়া ও চালে উন্নতমানের প্লেনশিট এবং ঢেউটিনের ব্যবহার করা হয়। বসবাসের জন্য একটি ঘরের স্থায়ীত্ব ধরা হয় ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। টিনের ঘর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব সহজেই স্থান্তর করা যায় বলে নদীভাঙ্গণ এলাকায় এসব ঘরের চাহিদা বেশী। রেডিমেট টিনের ঘর এই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলায় মালিরঅঙ্ক, ঘৌড়দৌড়, কনকসারসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে রেডিমেট ঘরশিল্প।