- টপটেন লেনদেনে শতভাগ ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার
- গেইনারের শীর্ষে মালেক স্পিনিং, লুজারে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স
- দর বেড়েছে ৩৭৩টির, দর কমেছে ৭ টির
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় বেড়েছে। উত্থান হয়েছে সব ধরনের সূচক। সপ্তাহটিতে অধিকাংশ সিকিউরিটিজ হাউজে শেয়ার বিক্রেতাই ছিল না। এর ফলে হাউজগুলোতে বাড়ে শেয়ার ক্রেতার অস্বাভাবিক চাপ। ক্রেতার চাপ বাড়ায় সপ্তাহটিতে ৯৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ১৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৬৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৭৩টির বা ৯৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, দর কমেছে ৭টির বা ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টির কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৭ কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ লেনদেন করেছে। এছাড়া ফরচুন সুজ ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, সোনালি পেপার ৩ শতাংশ, মালেক স্পিনিং ২ দশমিক ৯২ শতাংশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন ১ দশমিক ৭১ শতাংশ, মতিন স্পিনিং ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও কেডিএস এক্সেসরিজ ১ দশমিক ৫৭ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
গেল সপ্তাহে ‘এ’ক্যাটাগরি শতভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ক্যাটাগরির ৪০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন গেইনারে অবস্থান করেছে। সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন গেইনারে অবস্থান করেছে। অপরদিক টপটেন লুজারে মাত্র সাত কোম্পানি ওঠে এসেছে। এর মধ্যে ছয়টি ‘এ’ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লুজারে। বাকী একটি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লুজারে অবস্থান করেছে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে ‘এ’ক্যাটাগরির বেক্সিমকোর শেয়ার টপটেন লেনদেনের শীর্ষে ওঠে এসেছে। লেনদেন শীর্ষ থাকা কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিতে ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর দাঁড়ায় ১২৭ দশমিক ৯০ টাকায়। আগের সপ্তাহে শেষ কার্যদিবস শেয়ার প্রতি দর ছিল ১১৬ দশমিক ৮০ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। কারণবিহীন বেক্সিমকোর শেয়ার দর এভাবে বাড়াকে বাঁকা চোখে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে কদর বেশি ছিল। সপ্তাহটিতে বেক্সিমকো ছাড়া টপটেন লেনদেনে ‘এ’ ক্যাটাগরির অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ফরচুন সুজ, সোনালি পেপার, মালেক স্পিনিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ওরিয়ন ফার্মা, মতিন স্পিনিং এবং কেডিএস এক্সেসরিজ। এর মধ্যে ফরচুন সুজ ১৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, সোনালি পেপার ১৫১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিং ১৪৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন ১১৬ কোটি লাখ ২৫ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, মতিন স্পিনিং ৮৪ কোটি টাকা এবং কেডিএস এক্সেসরিজ ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হরেছে।
‘এ’ ক্যাটাগরির মালেক স্পিনিং শেয়ার দর টপটেন গেইনারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কোম্পানিটি একাই ১৪৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- সোনার গাঁও, ওরিয়ন ফার্মা, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং, সিমটেক্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফাস ফাইন্যান্স এবং হা-ওয়েল টেক্সটাইল। এর মধ্যে সোনার গাঁও (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মা (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, সিমটেক্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, ফাস ফাইন্যান্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং হা-ওয়েল টেক্সটাইল (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২২ দশমিক ২০ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
এছাড়া সপ্তাহটিতে মাত্র ৭টি কোম্পানির লুজারে তালিকায় ওঠে এসছে। এর মধ্যে ছয়টিই ভাল কোম্পানির (‘এ’ ক্যাটাগরি) শেয়ার। লুজারেরে উঠে আসা কোম্পানিগুলোর হলো- ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, ভ্যানগার্ড এএমএল রুপালি ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ড, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড, উসমানিয় কটন স্পিনিং এবং ফরচুন সুজ। সপ্তাহটিতে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) শেয়ার টপটেন লুজারের শীর্ষে ছিল। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কোম্পানিটি ৮৪ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, নিটল ইন্স্যুরেন্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৭১ শতাংশ, ভ্যানগার্ড এএমএল রুপালি ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ড (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, উসমানিয় কটন স্পিনিং (‘জেড’ ক্যাটাগরি) দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ফরচুন সুজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) দশমিক ৭৫ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।
“গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ১৬ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৩ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।”
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৬ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ থেকে বাড়লেও পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক