ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফাঁদে বিলুপ্ত দেশি মাছ

ফাঁদে বিলুপ্ত দেশি মাছ

জামালপুরের বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও জলাশয় থেকে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন জাতের মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রাকৃতিগত কারণ এবং অপরদিকে মানবসৃষ্ট করণ। এ উভয় কারণেই অনেক এখন দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ বিলুপ্তির পথে। জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালায় অভিনব পদ্ধতিতে তৈরি করা অবৈধ চায়নায় তৈরী কারেন্ট জাল বা দোয়ারি জালের ফাঁদ পেতে নিধন করা হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। সঙ্গে নিধন করা হচ্ছে পোনা মাছ। এতে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্যসম্পদ বিলুপ্তির আশঙ্কা করছে অনেকেই। অবৈধ এসব জাল দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু লোকেরা মা মাছ নিধন করলেও মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। ফলে বিলুপ্তি ও চরম হুমকিতে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং মাছের রেণু পোনাসহ বিভিন্ন প্রকার জলজ প্রাণি।

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার এক শ্রেণির লোকজন বাজার থেকে চায়না জাল ও অবৈধ কারেন্ট জাল কিনে অবাধে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই মাছ ধরার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। শিকারিরা সন্ধ্যারাতে কারেন্ট জাল ও চায়না জাল খাল-বিল ও জলাশয়ে পেতে রাখে পরদিন সকালে জাল উঠিয়ে মাছ শিকার করে। প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকায় এখন প্রকাশ্যে দিনের বেলাতেও এসব জাল পেতে রাখা হচ্ছে। এসব জালে ধরা পড়ে শুধু মাছই নয়, খাল-বিল, নদীতে থাকা কোনো জলজ প্রাণিও রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি মাছের রেনু পোনাও ছেঁকে তোলা হয় চায়না জাল দিয়ে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে চিংড়ি, পুঁটি, রুই-কাতলা, টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর,  শোল, টাকি, মলা-ঢেলা, বৌ, খইলসা, বাইলা ও ফইলা থেকে শুরু করে ছোট বড় কোনো মাছই রেহাই পাচ্ছে না এই নিষিদ্ধ জাল থেকে। মাছের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাঁকড়া, কুচিয়া, পানিতে বাস করা বিভিন্ন প্রজাতির উপকারি পোকামাকড়ও জালে আটকে যাচ্ছে। ডাঙ্গায় তুলে এসব প্রাণি ও পোকা মাকড় মেরে ফেলছে মাছ শিকারিরা। আরও জানা গেছে, ১ থেকে দেড় ফুট প্রস্থ, ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘের ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট এই জাল। লোহার রিং দিয়ে ঢোলক আকৃতি ও মাঝে মাঝে চর্তুভূজ আকারের তৈরি এই বিশেষ ফাঁদ। একটি করে জালে ৪০-৫০টি করে খোপ আছে। বিশেষ কৌশলে এই জালের দুই মাথা খুটির সঙ্গে বেঁধে পেতে রাখে খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের তলদেশ দিয়ে। জালের কাঠামোতে লোহা থাকায় জালটি পানির তলদেশে পৌঁছায়। এই জাল ক্ষুদ্র ফাঁসের কারণে সেই পথ ধরে ছোট থেকে যে কোন ধরণের বড় মাছ চলাচল করলে অনারাসে জালের ভিতরে প্রবেশ করবে। এইসব জালের ফাঁদে যে কোন মাছ প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। এ জালে আটকা পড়ে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমন ছোট পোনাও আটকা পড়ে যা কোন কাজে লাগে না বলে সেগুলো ফেলে দেয়া হয়। অবৈধ জালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাবে নদ-নদী, খাল-বিলগুলোতে মাছের প্রাচুর্য কমে গেছে। অচিরেই এসব জাল বন্ধ না হলে দেশের মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শংষ্কা এই এলাকাবাসীদের।

সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকার খাল-বিলে ও বিভিন্ন জলাশয়ে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে মৎস শিকারিরা। এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন করা হচ্ছে। বিশেষ করে চায়না জালের ব্যবহার করা হচ্ছে অবাধে। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও সুক্ষ্ম চায়না ও কারেন্ট জাল নদ-নদী, খাল-বিল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক সবধরনের দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে চায়না জালে। ফলে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়গুলো।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক এবারের বন্যার পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চলের মাছ চাষের পুকুরসহ অনেক জলাশয় তলিয়ে যায়। আর এর মধ্যেই শুরু হয়েছে মৎস্য নিধনের মহোৎসব। নিষিদ্ধ চায়না, কারেন্ট, বেড়জাল ও মশারি জাল দিয়ে দিনরাত মাছ নিধন করছে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি। এসব জালে বড় মাছের তুলনায় বেশি আটকা পড়ছে পোনা মাছ। এগুলো বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে অবাধে।

এই এলাকার বাসিন্দা সামাদ আলী, গিয়াস উদ্দিন, সুলতান উদ্দিন ও বারেক মিয়া এরা জানান, প্রতিদিন যেভাবে অবৈধ চায়না ও কারেন্ট জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা শিকার করা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং এর প্রতিকার নেওয়ার জন্য আশা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিসার এস, এম, খালেকুজ্জামান বলেন, চায়না ও অবৈধ কারেণ্ট জালসহ সবধরনের ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ। এরপরেও এসব জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার ও পোনা ধ্বংস বন্ধে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা দ্রুত সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং অবৈধ জাল গুলি অটককরে ধংস হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন