রামধান বড়ো হয়েছেন, বুড়ো হয়েছেন এ নদীর অথৈ জলের সঙ্গে কুস্তি করে। অথচ চোখের পলকে তার চিরচেনা জলাঙ্গী যৌবন হারিয়ে হয়ে গেলো মৃতপ্রায়। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘নদী কোনঠে? মরা ডাঁড়া খাল তো।’ শেষ চিহ্নটুকু এখনো আছে তার, ধুঁকে ধুঁকে নিঃশ্বাস ছাড়ছে ছোট যমুনা। ঠিক যেন রামধানের মতোই বার্ধক্যে পতিত এক দশক আগেও ঢেউ খেলানো প্রমত্তা নদীটি।
নদীর নাম ছোট যমুনা কেন, তা অবশ্য উদ্ধার হয়নি। দিনাজপুরের পার্বতীপুর-চিরিরবন্দর এলাকায় চন্ডীপুর বিলে ইছামতি থেকে উৎপত্তি ছোট যমুনার। তারপর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ফুলবাড়ি, বিরামপুর শহরের পাশ ঘেঁষে চলে গেছে ভারতে। কিছুটা এগিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে আবার এসেছে বাংলাদেশে। এ দফায় জয়পুরহাট পেরিয়ে নওগাঁ জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পড়েছে আত্রাই নদীতে। সর্বসাকুল্যে দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ খাতায় কলমে ১০৫ মিটার। অথচ ভরা বর্ষায়ও নদীর সবচেয়ে ভালো অবস্থা যেখানে, সেই ফুলবাড়ি জোড়াব্রিজের কাছে নদীর প্রস্থ ২০ মিটারের মতো।
ফুলবাড়ি, বিরামপুর, আক্কেলপুর এবং নওগাঁর মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহর এ নদীর তীরে অবস্থিত। আজ থেকে সাত-আট বছর আগেও ফুলবাড়ির এ নদীতে নৌকা চলেছে, থৈ থৈ জলে হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। তবে পানির অভাবে নাব্য হারিয়ে সরু খালে পরিণত হওয়া ছোট যমুনা এখন হেঁটে পেরোনো যাচ্ছে নিশ্চিন্তে। শহরবাসী উপযুক্ত ব্যবহার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ময়লা ফেলে ভাগাড় বানাবার। ফলত নদীর অন্তিম সৎকার সম্পন্নের পথে।
এ নদী খনন হয়েছিল শেষ কবে, জানা নেই। জয়পুরহাট ও নওগাঁয় খনন কার্যক্রম ২০২১ এ শুরু হলেও, উৎস থেকে ফুলবাড়ি বা বিরামপুর অংশে কোনো আশানুরূপ পদক্ষেপ নেই। দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি নদী খননের তালিকায়ও নাম নেই ছোট যমুনার। অতিসত্বর খনন না করলে যে উত্তরের আর দশটি নদীর মতো এ নদীকেও মুছে ফেলতে হবে মানচিত্র থেকে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই সরকারের সদয় দৃষ্টি পড়ুক ছোট যমুনার ওপর,বাঁচানো হোক এই নদীটিকে – এটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।