বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিজে কিছু করবেন বলে চাকরি করেননি। নিজে কিছু করবেন বলে বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু সফল হচ্ছিলেন না। তবে হতাশ হননি। এক সময় তিনি চীনে যান। সেখানে এমন একটি কারখানা দেখেন যার প্রায় ৯৯ শতাংশ নারীরা কাজ করতো। সেই থেকেই তার প্লাস্টিকের বস্তার কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা। যেই চিন্তা সেই কাজ। ২০১৩ সালে প্রথমে মাত্র ৩০ জন নিয়ে কারখানার কাজ শুরু করেন তিনি। এখন এই কারখানায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক কাজ করে। আগামীতে এ কারখানার পরিসর বাড়াতে চান তিনি।
কথাগুলো জানান সফল উদ্যোক্তা মাহমুদুল হক। তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলা সদরে। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের বস্তা ও ব্যাগ তৈরির কারখানা করে সফল হয়েছেন জয়পুরহাটের উদ্যোক্তা মাহমুদুল হক। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে অসহায় বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বেকার যুবকসহ প্রায় ৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর। আর এখানকার উৎপাদিত হরেক রকমের প্লাস্টিকের বস্তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
উদ্যোক্তা মাহমুদুল হক জানান, চীনে নারী শ্রমিকদের নিয়ে এমন একটি কারখানা দেখে উদ্বুদ্ধ হন মাহমুদুল হক। এরপর অসহায় বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে তিনি ২০১৩ সালে জয়পুরহাটের পুরানাপৈল ইউনিয়নের গতনশহর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন প্লাস্টিকের বস্তা উৎপাদনের কারখানা ‘হক বাংলা টেক’।
প্রথমে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন নিয়ে শুরু করেন এ কারখানার উৎপাদন কাজ। এরপরে পর্যায়ক্রমে এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৮০ জন অসহায় গরীব মানুষের। ছোট একটি জেলায় এমন একটি প্রতিষ্ঠানে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বেকার যুবকদের। বর্তমানে এ কারখানায় বেশিরভাগ কাজ করছে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীরা। অভাবের সংসারে একটি চাকুরী যেন বদলে দিয়েছে তাদের জীবন-জীবিকা।
নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারী জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমার স্বামী নাই, দুই সন্তান আছে। খুব কষ্টে সংসার চলতো। এ কারখানার কথা শুনে আমি এখানে চাকরির জন্য আসছিলাম। এখন আমি এখানে চাকরী করে খুব ভালভাবে চলছি।
শ্রমিক আফরোজা বেগম বলেন, ৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। এর ৬ মাস পর্যন্ত আমি মানবেতর জীবনযাপন করছিলাম। এখানে চাকরি হওয়ার পর থেকে আমার কষ্ট দুর হয়েছে। আমার মেয়ে এবারে এইচএসসি পাশ করেছি। তাদের নিয়ে সুখেই আছি।
আরেক শ্রমিক রাবেয়া সুলতানা জানান, তার স্বামী ১৩ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। অভাবের সংসারে ৫টি কন্যা থাকলেও নেই কোন পুরুষ। এমন অবস্থায় এখানে চাকরি পেয়ে পরিবারে এখন অনেকটা স্বচ্ছলতা এসেছে।
সাজ্জাদ হোসেন জানান, ডিগ্রী শেষ করার পর অনেক খোজাখুজি করেও কোন চাকরি পাচ্ছিলাম না। খুব হতাশ হয়েছিলাম, এমন সময় এই কারখানাতে চাকুরি পেয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছি।
উদ্যোক্ত মাহমুদুল হক জানান, অসহায় স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীরা সমাজে অনেকটা বঞ্চিত ও অবহেলিত। সেই কথা চিন্তা করেই তাদের চাকুরি দেয়ার এই সিদ্ধান্ত। এছাড়াও নারীরা কাজে ফাঁকি দেয়না। এখান থেকে প্রতিমাসে উৎপাদন হয় প্রায় ৬০ টন প্লাস্টিকের বস্তা। কেমিক্যাল দিয়ে সুতা তৈরি থেকে শুরু করে বস্তা তৈরি পর্যন্ত সব কিছুই এখানে হয়। তবে কারখানাটি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে হওয়ায় বড় বড় বায়াররা এখানে আসতে চাননা। তাই আরও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানী করতে সরকার পদক্ষেপ চাই। ২০২৪ সালের মধ্যে এখানে আরও ৩ থেকে ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আর এ প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার পাবেন অসহায় স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও বেকার যুবকরা বলেও জানান তিনি।