ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউরিয়ার পরিবর্তে ডিএপির ব্যবহার বাড়াতে হবে

ইউরিয়ার পরিবর্তে ডিএপির ব্যবহার বাড়াতে হবে
  • ডিএপিতে ইউরিয়া সারের উপাদান ১৮ ভাগ
  • নন ইউরিয়া সারের ব্যবহার বছরে ৩২ লাখ টনের বেশি
  • ইউরিয়াতে বেড়েছে কেজিতে ৬টাকা, ডিএপিতে কমেছে ৭৪ টাকা

ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে ৭৪ টাকা কমিয়ে ১৬ টাকায় কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। ইউরিয়াতে বাড়ানো কমেছে কেজিপ্রতি ৬ টাকা। ডিএপি মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ডিএপির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমার আশা থাকলেও তা কমেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী ঢাকায় সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সারের দাম বৃদ্ধি, মজুদসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিসচিব মো: সায়েদুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

মন্ত্রী বলেন, ফসলের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে ২০ভাগ কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে কৃষকের খরচও কমবে। এটি করতে হলে আমাদের কৃষক ভাইসহ সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এছাড়া নন ইউরিয়া সার ( টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বছরে ব্যবহার হয় ৩২ লাখ টনের বেশি। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৪ গুণ বেড়েছে, কিন্তু দেশে আমরা দাম বাড়াইনি। কাজেই ইউরিয়া সারের কেজিতে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদনে তা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

বর্তমানে দেশে চাহিদার বিপরীতে সব ধরণের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে- সে ব্যাপারে আমরা নিবিড়ভাবে মনিটর করছি। কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ করছি সারের দাম বাড়ায় বিএনপিসহ কিছু বাম দল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপির সার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ তাদের চরম নির্লজ্জতার প্রমাণ বলে মনে করি। বিএনপির শাসন আমলে সারসহ কৃষি উপকরণের চরম সংকট ছিল। তাদের সময়ে কৃষককে সার দিতে না পেরে পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে। সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। বিপরীতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সারের উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত রেখেছে। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোন সংকট হয়নি।

বিএনপি’র শাসন আমলে (২০০৫-০৬ অর্থ বছরে) সারে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরের তুলনায় বর্তমানে ২৮ (সাতাশ) গুণ বেশি বা ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকগণ সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। মন্ত্রী জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরের প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ভর্তুকির ছিল ১৫ টাকা, টিএসপিতে ২.৫৩ টাকা, এমওপিতে ২.৬২ টাকা, ডিএপিতে ৫.৫০ টাকা আর বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ইউরিয়াতে ৫৯ টাকা, টিএসপিতে ৮৬ টাকা, এমওপিতে ৯১ টাকা,ডিএপিতে ১০৭ টাকা।

মন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ০৩ থেকে ০৪ গুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়ার আমদানি ব্যয় ৮১ টাকা, টিএসপি ১০৮ টাকা, এমওপি ১০৬ টাকা এবং ডিএপিতে ১২৩ টাকা। এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৫৯ টাকা, টিএসপি ৮৬ টাকা, এমওপি ৯১ টাকা এবং ডিএপিতে ১০৭ টাকা। এবং সারে প্রদত্ত সরকারের মোট ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল ০৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা; সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদরদী, কৃষকের প্রতি রয়েছে তাঁর পরম মমতা। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিতরণসহ সার্বিক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে। কৃষি উপকরণের দাম যেমন কমিয়েছে তেমনি সহজলভ্য করে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ফলে গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোন সংকট হয়নি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন