আগের রস বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের রুহুলী গ্রামের জিবন সরকার। বয়সের তারতম্যের ধার দ্বারে না জীবন। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে জিবন বেছে নেয় যেকোন জীবিকা। ঠিক তেমনি বেছে নিয়েছে মানুষের তৃঞ্চা মিটানোর জীবিকা। আর তা দিয়ে চলে জীবন সংসার।
প্রতিদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ে ইঞ্জিন চালিত ভ্যানগাড়ি নিয়ে। যে গাড়িতে তিনি বসিয়েছেন আখের রস তৈরী করার যন্ত্র। বিভিন্ন স্থান থেকে আখ যোগাড় করা সহ ৩থেকে ৪শত টাকা খরচ হয় প্রতিদিন।
প্রতি গ্লাস আখের রস ১০ থেকে ২০ টাকা করে বিক্রি করেন। এতে দৈনিক বিক্রি হয় ৯শত টাকা থেকে ১২শত টাকা পর্যন্ত। এতে দৈনিক আয় হয় ৫ থেকে ৬শত টাকা। লোকজন লাইন ধরে আখের রস পান করে তৃঞ্চা মিটায়। জানা যায়, জিবন তার স্ত্রী সহ ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তার শুধু বাড়িটুকুই রয়েছে। যেখানে তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে।
অর্থাভাবের কারণে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে না পারায় মাধ্যমিক স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেনি কোনো ছেলেমেয়েই। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। ছোট মেয়ে এখনও বাড়িতে। অন্য তিন ছেলের মধ্যে কেউ যানবাহনের হেলপারি ও কেউ অন্যের কাজ কর্ম করে দেয়।
এভাবেই চলছে সংসার। তবে থেমে নেই বাবা জিবন সরকারের। বেছে নেয় মানুষের তৃঞ্চা মিটানোর কাজ। কিছু টাকা ধার নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মধ্যে একটি আখের রস তৈরী যন্ত্র ক্রয় করে। যা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে আখের রস বের করতো।
এতে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের হাট-বাজারে ব্যয় করতো। আর কিছু সঞ্চয় রাখতো। বর্তমানে তা দিয়ে ৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি ইঞ্জিন ক্রয় করে। এখন আর হাত দিয়ে আখের রস বের করতে হয় না। সহজেই তৃঞ্চার্থদেরকে দ্রুত আখের রস পান করাতে পারেন।
এ বিষয়ে রস বিক্রেতা জিবন সরকার জানান, ফুটপাথের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রির পাশাপাশি দোকানে দোকানে দোকানীদের খাইয়ে বেড়ান। সারা বছরই আখ পাওয়া যায়। সারা বছরই তিনি রস বিক্রি করেন। তবে চৈত্র-বৈশাখ মাসে রসের চাহিদা বেশি থাকে। রমজান মাসে রোজাদারদের কাছে এ রসের চাহিদা থাকে খুবই বেশি। ব্যবসা শুরু প্রথম দিকে তিনি ঠেলা গাড়িতে আখ নিয়ে বেড়াতেন। মাড়াই মেশিন হাতে ঘুরিয়ে আখ থেকে রস বের করতেন। সেদিন ফুরিয়েছে। ডিজিটাল যুগে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভ্যান নিয়েছেন। ভ্যানেই সেট করেছেন আখ মাড়াই মেশিন। ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে আখ, বালতি ভর্তি পানি সহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র বয়ে বেড়ান শহরের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে। দিবেন সরকার কষ্ট মনে নিয়ে আরো বলেন তাঁর পরিবারে কোন সদস্যদেরই কোন ধরনের সরকারি সহায়তা বা সুবিধা পায় না। তবে কেন পাচ্ছে না তা তিনি জানেন না। তাই তিনি মনে করেন এ কাজটি বেছে না নিলে এই বুড়ো বয়সে হয়ত তাকে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হত। এই আখের রস বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, জীবন যুদ্ধে জিবন একজন সফল সৈনিক। সরকারিভাবে প্রাপ্য সকল সুবিধা যাতে পায় সেই বিষয়টি দেখবো।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন, কাউকে আখের রস তৈরির জন্য মেশিন দেওয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে সরকার যদি বেকার যুবকদের জন্য এমন মেশিন সহজশর্তে কম মূল্যে বিতরণ করে, তাহলে দেশে অনেক বেকারত্ব লাঘব হবে।