ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২ বছরের প্রকল্প ৮ বছরেও অন্ধকারে

২ বছরের প্রকল্প ৮ বছরেও অন্ধকারে
  • ব্যয় বেড়েছে ২গুণের বেশি
  • সময় বেড়েছে ৩ দফায়
  • প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ

রাজধানীর পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে উত্তরা। ৫-৭ লোকের এলকাটিতে ৯৫ শতাংশ জায়গাতেই গড়ে ওঠেছে অবকাঠামো। লেকে ঘেরা এলাকাটি সৌন্দর্য্য হারিয়েছে দখল-দূষণে। সরু হতে হতে লেক এখন ইট-বালুর জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। পলে বৃষ্টি হলেও দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। তাই উত্তরা লেক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ‘উত্তরা লেক উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। দখলমুক্ত করার পাশাপাশি লেকের পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও চারপাশে হাঁটার সুবিধা সৃষ্টি ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

তবে প্রকল্প গ্রহণের ৮ বছর কেটে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি ২ বছর মেয়াদের এ প্রকল্পটি। উল্টো দফায় দফায় বেড়েছে ব্যয়। ৩৭ কোটি টাকার প্রকল্পে ৫৩ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৯০ কোটিতে। প্রকল্পটি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয় প্রকল্প গ্রহণের সময় কোন মাস্টার প্ল্যান বা স্টাডি পেপার ছিল না।

এ বিষয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্তরার লেক উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রাজধানীর উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবনা দেখে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্ল্যান কেন ঠিক নাই। এখন কেন কালভার্ট যুক্ত করতে হচ্ছে। এ জাতীয় উষ্মা প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরামর্শক নিয়োগের পর নতুন পরিকল্পনা ও জড়িপের আলোকে বাস্তাবতার নিড়িখে ১২ ধরেণের কাজ বৃদ্ধি করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে- মাস্টার প্ল্যান, জরিপ এবং বাস্তব প্রয়োজনের ফলে লেকের পানি পরিচ্ছন্নকরণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাটি ভরাট ও তীর সংরক্ষণ কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া স্লাজ অপসারণ, অফিস ইকুইপমেন্ট, ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ, পরিবেশগত সমীক্ষা, অফিস ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পরামর্শক ব্যয়, ওয়াকওয়ে ও নানা স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনের নিরিখে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ক্যাচ পিট নির্মাণ এবং ওয়েস্ট বিন স্থাপন কাজ যুক্ত হয়েছে।

এদিকে প্রকল্প প্রস্তবনায় হাতিরঝিলের আদলে তিনটি নান্দনিক ব্রিজ নির্মাণ করার কথা ছিল। এ কারণে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ব‍্যয় সংকোচনের কারণে প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে হাতিরঝিলের আদলে তিনটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণের উদ‍্যোগ। এর ফলে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা কমে যায়। এছাড়া ব্রিজসহ কিছু কাজ বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়ে যানবাহন ক্রয়সহ বিদ্যমান কালভার্ট পুর্নবাসনও।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ ১ দশমিক ২০ একর। ওয়াকওয়ে নির্মাণ ৪ হাজার ১৭০ মিটার, মাটি ভরাট কাজ ৬২ হাজার ঘনমিটার। তীর সংরক্ষণ কাজ সাড়ে ২৮ হাজার মিটার। স্লাজ অপসারণ ২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯০০ মিটার আইসিসি পাইপ স্থাপন, ১২৭টি ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় গ্রাস টার্ফিং ক্যাচপিট, লেকের পানি পরিচ্ছন্ন, ওয়েস্ট বিন স্থাপন, ওয়াল ও বিদ্যুৎতায়নের কাজ করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন