- লালমনিরহাটে ফের বন্যা
- তিস্তার ভাঙনের ভয়াবহ রূপ
উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপর ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটে জেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চলের ১০ হাজার পরিবার । হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতংক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের। সেই সাথে সেখানকার লোকজন আতঙ্কের পাশাপাশি একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন। গত দুইদিন ধরে তিস্তার ভাঙনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে জেলা সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীর তীরবর্তী ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, গড্ডিমারী ইউনিয়নের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার গত দুইদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। পরিবারগুলোর তালিকা করা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়নি।
এদিকে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্পার-২ এলাকায় তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা পাড়ের লোকজন অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেছেন। উপজেলার কালমাটি এলাকার গত দুই দিনে প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গোবরধন এম এইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোবরধন হায়দারীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও গোবরধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কোমর পরিমাণ পানি উঠায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি যাওয়ার রাস্তায়ও হাঁটু পরিমান পানি উঠায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বানভাসি মানুষ।
মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, হঠাৎ করে রাতেই তিস্তায় পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। তিনি আরও জানান, এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ, এর আগে আর কখনও এমন বন্যা দেখা দেয়নি। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবৃদ্ধি এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জি. আর সারোয়ার। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌল্লা বলেন, সকাল থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। বিকেল তিনটায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তাপাড়ের বসবাসরত মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।