কবির কবিতায় তেঁতুরের বর্ণনা পাওয়া গেলেও কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ব্যাপক ঔষুধি গুনসম্পুর্ণ উদ্ভিদ তেঁতুল। প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ নানা রোগ নিরাময়ে তেঁতুল থেকে ভেষজ উপায়ে ঔষুধ তৈরীর মাধ্যমে তা সেবন করে সুস্থ্যতা লাভ করে আসছে।
এক সময় মানুষ অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারতো না। ফলে মানুষ গাছ- গাছরা বা কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো। বিভিন্ন বহুমূখী রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকারী গাছের নাম হলো তেঁতুল গাছ। কিন্তু দু:খের বিষয় প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, গাছপারা কাঁটার মহা উৎসব, বন- জঙ্গল কেটে সাবাড় করা ও নতুন করে চারা রোপনের উদ্যোগের অভাবে এই ভেষজ গুনসম্পূর্ণ উদ্ভিদটি আজ বিলুপ্তের পথে।
জানা যায়, নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাড়ীর আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে, জঙ্গলে কিংবা রাস্তার ধারে থাকা তেঁতুল গাছ এখন আর চোখে পড়েনা। ঘরের কোণে বোতলে রাখা তেঁতেিলর আচার আর খাওয়া হয়না। অথচ কতই না গুণে গুনান্বিত এই তেঁতুল ফল। গ্রামীণ অপকথা ভূত- পেতনির বাসস্থান নামে আখ্যায়িত করার অনেকে ভয়েই তেঁতুল গাছ কেঁটে ফেলেছে।
ভেষজবীদগণের মতে, রোগ প্রতিকারে অনেক পদ্ধতিতে তেঁতুল ব্যবহার করা যায়। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কাজে বর্তমানে তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে মেদ জমাতে পারেনা। তেঁতলে টারটারিক এসিড থাকার কারণে খাবার হজমেও এটি দারুন সহায়ক। পেটের বায়ু ও হাত পা জ্বলাতে তেঁতুরের শরবত খুবই উপকারি। পেটের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, ধুতরা ও কচুর বিষাক্ততা থেকে রক্ষা পেতে তেঁতুল ফলের শাঁসের শরবত খেলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। নিয়মিত খেলে প্যারালাইসিস আক্রান্ত অঙ্গের অনুভূতি ফিরে আসে। এসব উপকার পেতে সরাসরি না খেয়ে পুরানো তেঁতুলের তিন/ চারটি দানা এককাপ পানির সাথে মিশিয়ে লবন অথবা চিনি দ্বারা সেবন করা অত্যাধিক নিরাপদ।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, তেঁতুল গাছটি আমাদের নিকট ঔষুধি গাছ হিসাবেই পরিচিত। আমাদের যখন হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়া ও দাঁত ব্যাথা করতো তখন আমাদের বাবা- মা এই তেঁতুল গাছের চূর্ন ব্যবহার করতো। মূখের ভিতরের ক্ষত সারাতে তেঁতুল পাতা সিদ্ধ মূখে নিয়ে দুই তিনদিন টার/পাঁচ বার গড়গড়া করলে আরোগ্য পাওয়া যায়। একই পানি দ্বারা শরীরের যেকোন নতুন বা পুরানো ক্ষতস্থান ধুঁয়ে দিলে ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়।
তারা আরো জানান, যদি এই ঔষুধি গুনসম্পূর্ণ গাছটিকে সুষ্ঠ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় ও চারা রোপনের মাধ্যমে টিকিয়ে না রাখা হয় তাহলে একদিন হয়তো প্রকৃতি থেকে চিরচেনা তেঁতুল গাছটি হারিয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুহাইমিনুল ইসলাম জানান, দেশী তেঁতুল গাছে ফলন আসতে খুব সময় লাগে, তাছাড়া সন্তোষজনক ভাবে ফলন না হওয়াই আজ বিলুপ্তের পথে দেশীয় তেঁতুল গাছ। তবে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা মেলার মাধ্যমে এই দেশীয় তেঁতুল গাছের গুরুত্ব তুলে ধরে চাষিদের উৎসাহিত করছি।
এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তেঁতুল একটি অসাধারণ ঔষুধি গাছ। আধুনিকতার ছোয়া বর্তমানে গ্রামেও লেগেছে। এখন মানুষ চায় শুধু স্বল্প সময়ে কীভাবে বেশি লাভ করা যায়। দেশীয় তেঁতুল গাছে বর্তমান চাহিদার চেয়ে তুলনা মূলক অনেক কম লাভ হয়। ফলে মানুষ আর দেশীয় তেঁতুল গাছ রোপন করেনা বা সংরক্ষণ করেনা। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিদেশী কিছু তেঁতুল গাছ। যে গাছ গুলোতে স্বল্প দিনের মধ্যেই ফলন শুরু হয়। প্রকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বেশি পরিমানে তেঁতুল গাছ রোপন করা দরকার। এই গাছ রোপনের জন্য আমরা জনসাধারণকে সচেতন করে আসছি।