- ৪.৫ বিলিয়ন ডলার চেয়ে চিঠি
দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়া নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে গত সপ্তাহে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন সরকারের দুই মন্ত্রী। এরপরে ঋণ নেওয় বা না নেওয়া নিয়ে আরো ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, এখন দেশের ঋণ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম আইএমএফের কাছে মূল্যস্ফীতি আর ডলার সংকট কাটাতে ঋণ সহায়তা চেয়েছেন।
তবে অবশেষে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার রলেন অর্থমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তা হিসেবে এ অর্থ চেয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর বিষয়টিকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে। গত রবিবার আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার কাছে চিঠি পাঠিয়ে ঋণের অনুরোধ জানানো হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশ কয়েকটি দেশের অর্থনীতিতে মন্দা ও অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক দেশই আইএমএফের কাছ থেকে সহায়তা প্যাকেজ নিচ্ছে। এই চিঠি পাঠিয়ে সে তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশও।
চলতি মাসের শুরুতে আইএমএফ পাকিস্তান ও তানজানিয়াকে যথাক্রমে ৪ বিলিয়ন ও ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এ ছাড়াও, পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ঘানাও দেড় বিলিয়ন ডলার চেয়েছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই অর্থায়ন সংস্থার কাছে।
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডিসহ অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় বলেছিলেন, ‘আইএমএফের কাছে শুধু টাকা চাওয়ার জন্য যাওয়া হয় না। তারা নীতি সংস্কার নিয়ে কথা বলে। আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আইএমএফের কাছ থেকে টাকা নেয়া উচিত।’
আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও রাসায়নিক সার আমদানি দায় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মজুত কমছেই। সর্বশেষ হিসাবে মজুত এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। তবে আইএমএফের ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে। রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের শর্ত মানলে তা ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। পাশপাশি থাকবে বিভিন্ন সংস্কারের শতার্বলি।
উল্লেখ্য, আইএমএফের কাছ থেকে এর আগে কখনোই এত বড় অঙ্কের ঋণ চায়নি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে ৯৯ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত মোট তিন দফায় আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার।