ঢাকা | সোমবার
১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানি সংকটে পাট জাগে দুশ্চিন্তা

পানি সংকটে পাট জাগে দুশ্চিন্তা

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছেন পাটচাষিরা। এরই মধ্যে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এ বছর পাটের ভালো দাম পেয়ে চাষিরা খুশি হলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ জমির পাটই কেটে জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পর্যাপ্ত পানির অভাবে।

কৃষকরা বলছেন, এ বছর রোগবালাই খুব একটা না থাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। আবার দামও গত বছরের চেয়ে বেশি। এতে পাট চাষে লাভের আশা দেখছেন তারা। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলসহ বিভিন্ন ডোবা ও নালায় পর্যাপ্ত পানি নেই। এ কারণে কৃষকরা পাট কাটতে পারছেন না। অনেকেই আবার ভারী বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন ডোবা-নালা পানিতে ভরাটের আশায় পাট কাটা শুরু করেছেন। তবে, কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা না পেয়ে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না।

এদিকে অনেকে বাধ্য হয়ে শ্যালোমেশিন ও মোটর দিয়ে ডোবা-নালায় পানি তুলে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। আবার অনেকে খাল-বিলে ও জলাশয়ে সামান্য জমাট বাঁধা পানিতে পাট-জাগ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ভালো ফলন হলেও লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষিকরা।

সরেজমিন উপজেলার মনোহরপুর, বরিয়া, কাশিনাথপুর, ধলহরাচন্দ্র, ধাওড়া, কুশবাড়িয়া, হাটফাজিলপুর, দিগনগর ও রতিডাঙ্গা, বগুড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, এবার এই বর্ষা মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেয়ার মতো পানি পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে কেটে রাখা পাট জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে খাল-বিল ও নদী-নালা বৃষ্টির পানিতে কানায়-কানায় ভরে যায়। কিন্তু এবার বৃষ্টি হলেও তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় এমন অবস্থায় পড়ছেন তারা।

বর্তমানে পাট কাটা ও জাগ দেয়ার জন্য কিষানের মজুরি সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৪০০-৭০০ টাকা। কিন্তু কিষাণ সঙ্কটের কারণে পাটচাষিরা নিজেরাই কিষানের কাজ করছেন। তারা গরুর গাড়ি বা মহিষের গাড়িতে করে জলাশয়ে পাট জাগ দিতে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে শ্যালোমেশিন ও মোটরের দ্বারা পানি তুলে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে অবশ্যই খরচের পরিমাণটা বেশি হয়ে যাবে। এক বিঘা (২০ কাঠা) জমির পাট কাটতে এবং জলাশয়ে নিতে চার হাজার থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এর পর সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হলে তাদের ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলেন পাটচাষিরা।

তারা আরো জানান, ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৮-১০ মণ পাটের ফলন হয়। আর খারাপ ফলন হলে তিন-চার মণ। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট ২৮-২৭ শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা।

উপজেলার বরিয়া গ্রামের কৃষক রফিক জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছি। ফলন আশানুরূপ হলেও পাট ঘরে তোলা পর্যন্ত যে খরচ হচ্ছে তাতে মনে হয় শ্রমটাই আমাদের বৃথা। এবার পাটের ভালো দাম না পেলে পরের বছর থেকে আর পাটচাষই করব না।

ধধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের  কৃষক জাকির মৃধা বলেন, ‘এবার পাটের ভালো ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। এতে চরম বিপাকে পড়েছি।’

মনোহরপুর ইউনিয়নের তোফাজ্জেল ইসলাম বলেন, ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমার মতো শত শত চাষি এবার পাট চাষ করেছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মাহফুজুর রহমান জানান, এবার শৈলকুপা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে মোট আট হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্র ছিল আট হাজার ২০০ হেক্টর। তিনি আরো জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। কৃষকরা পাট পচাতে পারছেন না। তাই, পানি উন্নয়ন বোর্ড আগামী ২১ জুলাই থেকে সেচের মাধ্যমে জিকে সেচ খালে পানি সরবরাহ করবে। এতে কৃষকদের কিছুটা বেশি খরচ হবে। তবে পাটের ন্যায্যমূল্য পেলে এই লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন