কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুন কারুকার্য রচিত বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাঁখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহা সূখে অট্টলিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে,,,
কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী এ কবিতায় বাবুই পাখির প্রধান আস্তানা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তাল গাছ তেমন দেখা যায়না, তেমনি দেখা মেলেনা কবিতার নায়ক বাবুই পাখিও।
পত্নীতলা উপজেলার গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা নদীর পারে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে আপন ঘর নিমার্ণে ব্যস্ত শিল্পমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখন এসব দৃশ্য শুধুই কল্পনার বিষয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা অনেকটা বিলীন হতে চলছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বঠর আগেও গ্রাম- গঞ্জের মাঠে- ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা।
একসময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। এর মধ্যে অনেক বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তের পথে। টিকে আছে শুধু দেশি বাবুই পাখি। বাসা তৈরীর জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল গাছ, নারিকেল গাছ, সুপারি গাছ ও খেঁজুর গাছ কমতে থাকায় আবসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি।
এক সময় উপজেলার যেসব গ্রামে তালগাছে ভরপুর ছিলো, সেইসব তাল গাছের পাতায় পাতায় মোড়ানো থাকতো বাবুই পাখির বাসা। পাখির কিচিরমিচির শব্দতে পুরো এলাকা মূখরিত থাকতো এমনকি বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে এলাকাবাসীর ঘুম ভাঙে যেত। আষাঢ় মাস আসার আগ থেকেই বাবুই পাখি তার বাসা বুনতে শুরু করতো। কালের আবর্তনে সেই সব গ্রামে তালগাছের সাথে হারিয়ে গেছে বাবুই পাখির বাসা। এখন আর বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মূখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।
এবিষয়ে পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিগণ জানান, এমন একটা সময় ছিলো যখন গ্রামাঞ্চলে প্রচুর পরিমানে তালগাছ, নারিকেল গাছ, সুপারি গাছ ও খেজুর গাছ দেখা যেতো। সেই সব গাছে বাবুই পাখির শিল্পের বাসা তৈরী ও পাখির কিচিরমিচির শব্দ মানুষকে আনন্দিত করতো। কিন্তু কালের আর্বতনে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে গ্রাম- গঞ্জেও। জলাশয়সহ কৃষিজমি ভরাট করা করা হচ্ছে নিজেদের চাহিদা মিটানোর জন্য। গাছপালা কেটে বসতির জন্য অট্টলিকা তৈরী করা হচ্ছে। তাই এখন আর আগের মতো গ্রামাঞ্চলের রাস্তার ধারে , বাড়ির পাশে তালগাছ, খেজুর গাছ যেমন দেখা যায়না তেমনি দেখা মিলেনা বাবুই পাখির বাসা। সুতরাং বলায় যায়, গ্রামের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে বাবুই পাখিও। বাবুই পাখির এই শৈল্পিক নির্দেশনা রক্ষা করার জন্য দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি এই উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তাহলে বাবুই পাখি বইয়ের পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ থাকবে।
পত্নীতলা উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অনেকগুলো বিলুপ্তের পথে যেমন: বাবুই পাখি। গ্রাম- গঞ্জের জনসাধারণই পারে বাবুই পাখিকে রক্ষা করা। তাছাড়া খুব দ্রুত অন্যান্য পশু- পাখির মতো আমাদের মাঝ থেকে বাবুই পাখিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।