ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেড়েছে সেবা গ্রাহক রাজস্ব

বেড়েছে সেবা গ্রাহক রাজস্ব
  • শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • ছয় মাসে রাজস্ব বেড়েছে ৭,৪২১.৮ কোটি টাকা

শেয়ারহোল্ডারদের ১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্রামীণফোন (জিপি)। অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে এই টাকা শেয়ারহোল্ডারদের দেবে কোম্পানিটি। গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

তথ্য মতে, গ্রামীণফোনের সর্বশেষ পর্ষদ সভায় শেয়াহোল্ডারদের জন্য ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। জানুয়ারি থেকে জুন ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ১২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে প্রতিষ্ঠানটি। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার প্রতি ১২ টাকা ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দেওয়া হবে। সেই হিসেবে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮৭কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ২৭৫ টাকা। পর্ষদ ঘোষিত লভ্যাংশের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয় ১০ আগস্ট। অর্থাৎ এই দিন যাদের কাছে কোম্পানির শেয়ার থাকবে। তারা ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৬ টাকা ৮২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৬ টাকা ৩০ পয়সা। দুই প্রান্তিক (জানুয়ারি থেকে জুন) মিলিয়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ১২ টাকা ৮২ পয়সা। গত বছরের একই সময় ছিল ১২ টাকা ৮৯ পয়সা। গত ৩০ জুন ২০২২ তারিখে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩৭ টাকা ২৫ পয়সা।

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় গ্রামীণফোন। সমাপ্ত বছর ডিসেম্বর। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৪ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১৩৫ কোটি ৩ লাখ ২২টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকরা একাই ৯০ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে।  এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালকরা ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, বিদেশিরা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারীরা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে।

এদিকে, গত ছয় মাসে গ্রামীণফোনের রাজস্ব বেড়েছে বলে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নেটওয়ার্ক ও তরঙ্গে বিনিয়োগ, ধারাবাহিক নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের মাধ্যমে গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন। চলতি ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে ৭,৪২১.৮ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে সংস্থাটি। গত বছর একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব বৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে আরও ৯ লাখ নতুন গ্রাহক গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে, যার ফলে বছরের প্রথমার্ধ শেষে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.৪৬ কোটি। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৪.৬ শতাংশ বা ৪.৬২ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এবিষয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক বাংলাদেশের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় ছিলো। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, যা ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে এবং লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প চালু করে ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছি। পাশাপাশি, আমরা দুর্যোগকবলিত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য একসাথে কাজ করছি। কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় এ প্রান্তিকে সামগ্রিক অবস্থার ওপর বৈশ্বিক মহামারির প্রভাব স্থিতিশীল রয়েছে, যার ফলে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের প্রথমার্ধ শেষে আমাদের মোট ফোরজি সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮,৪০০। নেটওয়ার্ক অভিজ্ঞতার উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী পণ্যের কারণে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বছরপ্রতি ৩.২ শতাংশ এবং সর্বমোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.৪৬ কোটিতে। আমাদের ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩.১৫ কোটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২.৭ শতাংশ বেশি।

গ্রামীণফোন উদ্ভাবন, নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য আমরা অনুমোদিত সর্বোচ্চ পরিমাণ তরঙ্গ অধিগ্রহণ করেছি। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে সেবার মান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে এবং বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনে অবদান রাখবে; পাশাপাশি, শহর ও গ্রামাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে  রাজস্ব এবং ইবিআইটিডি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রয়েছে। প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭,৪২১.৮ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ। এ বছরের প্রথমার্ধে, গত বছরের তুলনায় আমাদের সাবক্রিপশন ও ট্র্যাফিক রাজস্ব বেড়েছে  ৫.৬ শতাংশ। আমাদের পারফরমেন্সের সামগ্রিক উন্নয়নে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৭ শতাংশ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২.৯ শতাংশ। বান্ডেলের ব্যবহার গত বছরের চেয়ে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথমার্ধে, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির কারণে ইবিআইটিডিএ মার্জিন ৬১.১ শতাংশ নিয়ে ইবিআইটিডিএ বৃদ্ধি পেয়েছে বছরপ্রতি ৩ শতাংশ।২৩.৩ শতাংশ মার্জিন নিয়ে প্রথমার্ধে কর পরবর্তী মোট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১,৭৩০.৫ কোটি টাকা। আমরা আনন্দিত যে, ২০২১ সালের ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় পরিচালনা পর্ষদ আমাদের সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারদের জন্য শেয়ার প্রতি ১২.৫ টাকা অভ্যন্তরীণ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন