নরসিংদীতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ঈদ আনন্দে মেতেছে দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন পশু কোরবানির কারণে অধিকাংশ মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারেনা। তাই ঈদের ছুটিতে বিনোদন প্রেমীরা তৃতীয় দিনও নরসিংদীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। ব্যস্ত জীবনে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দেশের দূর ভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সের হাজারো মানুষ ছুটে এসেছে দেশের বৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র ড্রিম হলিডে পার্কে। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ পার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়ে ঈদ আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছুর চিন্তা করে নতুন নতুন রাইডের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কথা ভেবে আন্তজার্তিক মান ধরে রাখার জন্য পার্কে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছেন পার্ক কতৃপক্ষ।
ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকালে ড্রিম হলিডে পার্কের প্রধান গেইটের সামনে টিকেট কাউন্টারের সামনে বিশাল লাইন। লাইনে দাড়িয়ে টিকেট কিনছে বড়রা। এখানে বড়দের প্রবেশ মূল্য ৩২০ টাকা, ছোট শিশুদের (৫ বছরে উপড়ে) ২২০ টাকা। অন্যদিকে পরিবার-পরিজন প্রবেশ গেইটের সামনে লাইনে দাড়িয়ে আছেন। টিকেট নিয়ে এলে একের পর এক পার্কের ভিতর ঢুকছেন বিনোদন প্রেমীরা। ভিতরে দিকে ঢুকে দেখা গেলো শিশুদের সকল রাডার্স পরিপূর্ণ। শিশুদের ঈদ আনন্দ দেখে মা-বাবারও খুশিতে আত্মহারা।
অন্যদিকে, পার্কটিতে তৈরি করা স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে চলছে স্কাই ট্রেন, বুলেট ট্রেনে চড়ে শিশুসহ সকল বয়সী দর্শনার্থীর আনন্দ উৎসব। চড়ছেন প্যাডেল বোটে, ঘুরে ঘুরে দেখছেন ভূতের রাজ্য। এ যেন এক স্বপ্নপুরী। পদ্মা সেতুর উপরে স্কাইট্রেন, বুলেট ট্রেন, এয়ার বাইসাইকেল, সোয়ান বোট, ওয়াটার বোট, রোলার কোস্টার, সুইং চেয়ার, ওয়াটার পার্ক, বাম্পার কার ক্যাবল কার, নাইড-ডি থিয়েটার, ও স্পিডবোটসহ মোট ২৫ টি রাইড রয়েছে এখানে। এছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে সাফারি পার্ক ও চিরচেনা সবুজের সবুজময় আদর্শ গ্রাম।
তবে পার্কে সবচেয়ে বেশি ভীড় লক্ষ্য করা গেছে ওয়াটার কিংডমে। এখানে পার্কের নিজেস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আনসার দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন পার্ক কতৃপক্ষ। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে ওয়াটার কিংডমের ঢেউয়ের তালে দুলছে উচ্ছ্বসিত তরুণ তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ। এখানে তরুণ তরুণীরা ডিজে জিকু পালের গানের তালে তালে গানের ছন্দে নেচে নেচে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ করছে আর পানি ছিটিয়ে মজা করছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ওয়াটার কিংডমে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছে। কেউ কেউ ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন সুন্দর করে সময় কাটাতে, কেউবা প্রেমিক- প্রেমিকা নিয়ে এসেছে এই ওয়াটার কিংডমে ঈদ আনন্দ করতে। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া এই ডিজে চলবে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত। ঈদকে ঘিরে এখানে ভীড় করছেন নানা বয়সী দর্শনার্থীরা আর ঈদ আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীরা। এই দৃশ্য নরসিংদীর ড্রীম হলিডে পার্কে।
এদিকে ভূতের বাড়িতে শিশু কিশোরসহ বড়দের ভীড়ও কম নয়, ভূতের বাড়ি নামটা শুনলে কেমন জানি শরীরটা শিউরে উঠে। হে ভূত দেখতে হলে জন প্রতি ১১০টাকা করে টিকেট কিনে প্রবেশ করতে হবে। তবে সাবধান যারা ভূতকে ভয় পান তারা কেউ প্রবেশ করবেনা। ভূতের বাড়ির ভিতরে আসল চারটি ভূত রয়েছে যারা মানুষকে ভয় দেখাতে ব্যস্ত থাকে সবসময়। প্রবেশ করার সময় ভূতিক একটা আওয়াজ আসে ভিতর থেকে। ভিতরে অন্ধকার, কম আলোর রঙ্গিন বাতির আলো, ভূতদের চিৎকার আর ভূতদের বাস্তব চিত্র দেখে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। শিশু ও নারী দর্শনার্থীরা সবচেয়ে ভয় পাচ্ছেন জীবন্ত ভূত দেখে।
রাজধানীর বনানী থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আসাদোজ্জামানের বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে অনেক বিধি নিষেধ ছিল। বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ ছিলো। এখন এই বিধিনিষেধটা অনেকটা শিথিল হয়েছে। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ করতে ঘুরতে আসলাম। হওয়ার কারণে রাজধানীর কাছাকাছি হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ। ঢাকার ভিতরের সব বিনোদন কেন্দ্রগুলো দেখা শেষ। তাই এবার নতুন একটি বিনোদন কেন্দ্র নরসিংদীর পাঁচদোনার ড্রিম হলিডে পার্কে এসেছি। এখানে সুন্দর পরিবেশ ভাল লেগেছে আগামীতে আবারও আসবো বন্ধুদের নিয়ে।
গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে পরিবার নিয়ে পার্কে এসেছে আলমগীর মিয়া। ওয়াটার কিংডমে সামনে ছোট বাচ্চাকে কাধে নিয়ে ডিজে গানের সাথে সাথে নাচছেন। এসময় তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবার বাচ্চা নিয়ে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য পার্কে এসেছি। পার্কটি খুব দৃষ্টি নন্দন। এর পরিবেশ ও খুব সুন্দর। বাচ্চারা খুব আনন্দে সময় কাটাচ্ছে। আমরা খুব আনন্দ করছি। সমচেয়ে ভালো লেগেছে এই ওয়াটার পার্ক।
নরসিংদী ড্রিম হলিডে পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা জানান, আমরা প্রতিবছরই পার্কে নতুন নতুন রাইড সংযোজন করি। আগামী বছর দর্শনার্থীদের জন্য আরো নতুন রাডর্স সংযোজন করবো। যাতে দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে তাদের ঈদ উপভোগ করতে পারে। এবার পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে স্কাই ট্রেন চালু করা হয়েছে। যাতে দর্শনার্থীরা পদ্মা সেতুর আনন্দ উপভোগ করতে পারছে। আর আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োজিত রয়েছে।