- দম ফেলার ফুসরত নেই কামারপাড়ায়
আর মাত্র দুইদিন পরেই কোরবানির ঈদ। তাই সবাই কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। খামারিরা পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত। হাটগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত। শেষ মুহূর্তে পশু কেনাবেচা করছে সবাই। নীরব কামার পল্লীতে টুং টাং শব্দে মুখর। যেন ব্যস্ত সবাই। বাদ যায়নি ভ্রাম্যমাণ কামার শিল্পীরাও। তারাও যন্ত্র কাঁধে নিয়ে পাড়া মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। কারো হাতে কোনো সময় নেই। সবাই কোরবানীর প্রস্তুতি নিতেই ব্যস্ত।
কোরবানি করতে দা, চাকু, বটি, কুড়াল, চাপাতির প্রয়োজন হয়। কসাই ছাড়া অন্যদের সব সময় এগুলো কাজেও লাগে না। তাই দা, বটি, চাকু, ছুরি তৈরি করতে অথবা যাদের এগুলো পুরাতন হয়ে গেছে বা জং পড়ে গেছে তারা সবাই এখন ছুটছেন কামার পল্লীতে। কামাররাও অধিক মূল্য হাঁকছেন এগুলো করতে। অনেকে আবার সান দেয়ার যন্ত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন এসব সরঞ্জাম ধারালো করার জন্য। হাট-বাজারে এসব সামগ্রির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানে কামাররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কয়লার আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, ছুরি, চাকু, চাপাতি, কুড়াল, বটিসহ ধারালো বিভিন্ন সামগ্রী। আর ফাঁকে ফাঁকে চলছে পুরনো দা, বটি, ছুরি ও চাপাতিতে শান দেয়ার কাজ। তাই দম ফেলার মতো সময় নেই কামারদের। কাজের চাপ বেশি ও শ্রমিকের সংখ্যা কম থাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের কর্ম ব্যস্ততা।
তাদের তৈরি এসব জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়িদের সরবরাহ করছেন তারা। বিভিন্ন বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে ধারালো এসব যন্ত্র তৈরি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন কামার শিল্পীরা।
কামারশিল্পী গোপাল কর্মকার বলেন, এমন চিত্র সারা বছর থাকে না। শুধু মাত্র কোরবানী এলেই আমাগো কদর বাড়ে। দুথটা ডাল ভাতের ব্যবস্থা হয়। দাদা বছরের একবার রাইত ভইরা কাম করলে কি অইবো। হারা ( সারা ) মাসতো বইয়া বইয়া খাইতে হয়।
নেপাল কর্মকার বলেন, আগে লোহার জিনিসের কদর আছিলো। এহন ষ্টীলের জিনিসের কদর বাড়ছে। হেই লইগ্যা মোগো(আমাদের) লোহার ব্যবসায় জং ধরছে। এহন সরকার যদি মোগো দিগে একটু সাহায্য সহযোগিতা হরতে তাইলে মনে হয় বাপ-দাদার এই পেশাডা ধইর্রা রাখতে পারতাম।