ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদে ভোগান্তি কমের আশা

ঈদে ভোগান্তি কমের আশা

সারাদেশে বিদ্যুৎ সংকট চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। আষাঢ়ের শেষ ভাগে রোদ-মেঘের লুকোচুরি আর ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে অসহনীয় লোড শেডিং। আর এসব কিছুকে সঙ্গী করে আর একদিন পর রবিবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। কোরবানির ঈদে ফ্রিজে মাংস রাখার প্রবণতা চলে আসছে বরাবরই। তবে এবারের ঈদে বিদ্যুৎ সংকট প্রকট হতে পারে এমন আশঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও দাবি তোলা হয়েছে বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের।

মূলত, বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতির মধ্যে খোলাবাজার বা স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জ্বালানি এ পণ্যটির দাম না কমা পর্যন্ত দেশীয় গ্যাস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে কমে গেছে দেশে সীমাবদ্ধ উৎপাদনের গ্যাসের সরবরাহ।

ইতোমধ্যে গ্যাস সংকটে বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। গত ৩ জুলাই থেকে দেশে হঠাৎ লোডশেডিং বেড়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার এবং গ্রামাঞ্চলে আট থেকে ১০ বার লোড শেডিং হচ্ছে। এদিকে আবাসিক এলাকায় কমে গেছে গ্যাসের চাপ, কোনো রকমে চলছে রান্নার চুলা। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গত বুধবার বিকেলে এফবিসিসিআই আয়োজিত পাওয়ার, এনার্জি এন্ড ইউটিলিটিজ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির তৃতীয় সভায় বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ তৈরির আহ্বানও জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, সরকারি মালিকানাধীন দেশের জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি জুলাইয়ে প্রতি ইউনিট এলএনজি আগের চেয়ে প্রায় ১৫ ডলার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যা জুনের শেষ সপ্তাহে স্পট মার্কেট ছিলো ২৫ ডলারের কাছাকাছি। এজন্য সরকার আপাতত এলএনজি আমদানি করছে না। তবে জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস ঘাটতি হচ্ছে, তা দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি কূপে ওয়ার্কওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বিশ্ববাজারে এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাসস্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে উন্নত অনেক দেশ এখন বিদ্যুৎ রেশনিং করছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গড়ে সরবরাহ করা হয় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ গ্যাপ হচ্ছে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তার মধ্যে দেশে উৎপাদিত গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে দুই হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকিটুকু পূরণ করা হয় আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে।

গত কয়েক দিন ধরে গ্যাসের সরবরাহ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৭৫০ থেকে দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত মাসে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা হয় দৈনিক ৭৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দুই দিন ধরে কমিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ওমান ও কাতার থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন