ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাটভর্তি গরু ক্রেতা কম

হাটভর্তি গরু ক্রেতা কম

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় সাখাওয়াত হোসেন। শনিবার (২ জুলাই) বাড়ির পোষা ৫টি গরু নিয়ে এসেছিলেন জয়পুরহাট সদরের নতুন হাটে। সকালে আসলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন গরুর তিনি বিক্রি করতে পারেননি। সাখাওয়াতের চোখমুখে হতাশার ছাপ। হাট ভরা গরু আসলেও দুরের পাইকারী ও সাধারণ ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। ঈদ কাছে আসলেও এখনো জমেনি কেনাবেচা। এমনই চিত্র রাজশাহী অঞ্চলের গরুর হাটগুলোর।

সিলেট অঞ্চলে বন্যার হানা। লালমনিহাট, গাইবান্ধসহ উত্তরের কয়েকটি জেলাও বন্যার রূপ ছিল ভয়ঙ্কর। ঈদ কাছে চলে আসলেও গরু বিক্রি করতে খামারীদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হলেও ক্রেতার দেখা নেই। উত্তরাঞ্চলের হাটগুলোতে গরু কিনতে পাইকারী নামে সিলেট ও ঢাকা অঞ্চল থেকে। সিলেটে এবার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে পাইকারদের পাচ্ছে না এ অঞ্চলের খামারীরা। পাশাপাশি ঢাকার পাইকাররা এবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের দিয়ে ছুটেছেন পাইকাররা। বন্যা হানা দিয়েছেন উত্তরের কয়েকটি জেলাতেও। ওইসব জেলাতে এবার কোরবানী দেয়ার মানুষের সংখ্যা অন্যবারের চেয়ে কমবে।

এসব নানানমুখি প্রভাব পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের হাটগুলোতে। হাট ভরা গরু থাকলেও ক্রেতার অভাব। খামারীদের অনেকেই ভেবেছিল যে ঈদের চাঁদ উঠলে ক্রেতায় জমে উঠবে হাট। কিন্তু চিত্র উল্টো। হাটগুলোতে পশু আমদানি বেশি। বেচাকেনা অনেকটাই কম। যে ক্রেতারা উপস্থিত হচ্ছেন হাটে তাদের বেশিরভাগই গরুর দাম হাকাচ্ছেন কম। এতে খামারীদের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সারা বছর অনেক কষ্ট করে গরুগুলো পালন করেছি। গরুর খাবারের দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে অনেক খরচ। গরুগুলো জয়পুরহাটে নিয়ে আসার কারণ একটু দাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজনও ক্রেতা এসে গরুগুলোর দাম বলেনি।

রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে সিটি হাট। জমজমাট পশুর হাট। রবিবার ছিল হাটবার। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রচুর গরু নামে হাটে। হাট ভর্তি গরু থাকলেও ক্রেতার দেখা তেমন নেই।

রাজশাহী সিটি হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আমজাদ হোসেন নামে এক খামারী বলেন, ৩টি গরু নিয়ে এসেছি বিক্রি করার জন্য। গরুর দাম খুব কম বলছে ক্রেতারা। এ দামে বিক্রি করলে লোকশানই হবে। জামাল নামে আরেক খামারী বলেন, সকালে ৫টি গরু নিয়ে এসেছি ২ বিক্রি হয়েছে। এই দুই গরুতে ৭ হাজার টাকা লস হয়েছে।

রাজশাহীর সিটি বাইপাস, নওগাঁর চৌবাড়ীয়া, রাজশাহীর কাঁকনহাট, মুণ্ডুমালা, জয়পুরহাটের নতুন হাটসহ আরো কয়েকটি হাটের তথ্য অনুযায়ি, ছোট সাইজের গরু (৬০ কেজি মাংস হবে) এমন গরুর দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরু (৮০ কেজি মাংস হবে) ৫৫ থেকে ৬০ হাজার ও বড় সাইজের গরু (১২০-১৬০ কেজি মাংস হবে) লাখ টাকার উপরে দাম হাকানো হচ্ছে।

১২ কেজি মাংস হবে এমন ছাগলের দাম ৮ থেকে ৯ হাজার, ১৫ থেকে ১৮ কেজির দাম ছাগল ১৩ থেকে ১৫ হাজার ও ২০ থেকে ২৫ কেজি মাংস হবে এমন ছাগলের দাম হাকানো হচ্ছে ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

জয়পুরহাট জেলার নতুনহাট ইজারাদার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, কোরবানীর হাটে প্রচুর গরু আমদানি হলেও এবার বন্যার কারণে দুর থেকে ব্যবসায়ীরা কম আসায় তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। হাটে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাব সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এছাড়া আমাদের সাদা পোষাকের লোক রয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে, প্রাণিসম্পদ অফিসার দিয়ে গরুর পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রাজশাহীর মুণ্ডুমালা হাট ইজারাদার আতিকুর ইসলাম জানান, কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা। এবারে ক্রেতা কম। যেসব ক্রেতা হাটে আসছেন তাদের চাহিদা ছোট গরু।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন