ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুষের টাকাসহ আটক সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঘুষের টাকাসহ আটক সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান আটকের ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রবিবার বিকালে দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং- ১।

মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, গেল ১ জুলাই সকাল ৯.৩৫ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরের তল্লাশী গেইট থেকে প্রবেশের সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সার্ভেয়ার আতিকের কাছে টাকা পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজকে জানান। তিনি তাৎক্ষণিক আতিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ততক্ষণে সার্ভেয়ার আতিক ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ায় তাকে আটকাতে পারেনি কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

পরে তাকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়। সেখানে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টাকার উৎস সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। পরে গোয়েন্দা সংস্থা সার্ভেয়ার আতিককে কক্সবাজার ফেরত এনে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে সার্ভেয়ার আতিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সার্ভেয়ার আতিক টাকার উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করেন।

পরে ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করে তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় আদালতের বিচারক তাকে ২ জুলাই কারাগারে প্রেরণ করেন।

সবশেষ দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর সার্ভেয়ার আতিকের বিরুদ্ধে রোববার দুর্নীতি দমন আইনে মামলা দায়ের করে দুদক কক্সবাজার কার্যালয়।

দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সার্ভেয়ার আতিক উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তরের চেষ্টা করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহেই মোটা অংকের নগদ টাকা নিয়ে সার্ভেয়ার আতিক ঢাকায় যেতেন। মাঝে মাঝে তাকে সপ্তাহে কয়েকবার ঢাকা যেতেও দেখা গেছে। তবে, কার কাছে টাকাগুলো নিয়ে যেতো তা এখনও স্পষ্ট নয়। 

আটক সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তিনি কক্সবাজার শহরের গাড়ীর এলাকার জনৈক বাপ্পির রাজকীয় ফ্ল্যাট বাড়িতে ছিলেন। তিনি মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে  প্রায় ২ বছর ধরে  দায়িতে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি মেগাপ্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করছে সরকার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে র‌্যাব কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ার ছড়া সার্ভেয়ার ফেরদৌসের বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৭ লাখ টাকা জব্দ করেছে।

এছাড়া শহরের বাহারছড়া এলাকায় সার্ভেয়ার ফরিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এব্যাপারে দায়ের করা মামলার তদন্ত করে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি তদন্তে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ দুর্নীতির তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরিচ্যুত করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন