কোরবানির ঈদের আগে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল বা বাইক চলাচলের অনুমতি পাবে না, এমন কথা শোনা যাচ্ছিলো। সে কথাই সত্যি হলো। বাইক চলাচল বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন। সেই হিসেবে কোরবানির ঈদের আগে পদ্মা সেতুতে বাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা না।
গতকাল রবিবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদের আগে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ওই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন সেতুতে বেপরোয়া গতিতে চালানোসহ ওইদিনেই দুর্ঘটনায় দুইজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ফলে ২৭ জুন সকাল থেকেই পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেই নিষেধ বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে কি-না এ প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,‘এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন। পদ্মাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ (এআই) ক্যামেরা বসবে। স্পিডগান বসানো হচ্ছে। এগুলো বসলে তারপর ওনারা কমফোর্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন, কী করা যায়।’
সেতুতে বাইক চলাচল ঈদের আগে হবে কি না জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে হওয়া খুব ডিফিকাল্ট বলে আমার মনে হচ্ছে। ঈদের আগে মনে হয় না, এটা হবে।’ বাইক চলাচলা প্রসঙ্গে এর আগে গত ২৮ জুন সচিবালয়ে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতুতে স্পিডগান ও সিসি ক্যামেরা বসানোর পর মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দুর্ঘটনার পর ২৭ জুন পদ্মা সেতুতে পারাপার সময় নির্ধারিত বিধি নিষেধ পালন নিশ্চিত করতে কড়াকড়ি হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। পদ্মা সেতুতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী সদস্যরা বিশেষ নজর দেন। গত ২৭ জুন সকাল থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। একই সাথে পায়ে হেঁটেও পারাপার বন্ধ। সেতুতে গাড়ি থামিয়ে আড্ডা-গল্প পুরোপুরি বন্ধ। সেতুর ওপরে গাড়ি চালাতে হবে পূর্বের বেঁধে দেওয়া গতিতে। কেউ যেন অনিয়ম না করে সে জন্য নিয়মিত টহল দেয় সেনাবাহিনী।
উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন সেতুর ওপর চিত্র যেমন ছিল, পরদিন ২৭ জুন সেই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক) প্রকাশিত হওয়া ভিডিওতে সেতুর ওপর রাস্তার পাশে মানুষকে আড্ডা গল্প ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে ২৭ জুন সেটা ছিল অচেনা। বলতে গেলে খালি ছিল সেতুর ওপরের রাস্তা। কেউ যাতে গাড়ি থেকে সেতুতে না নামে ও ছবি না তোলে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। ফলে সোমবার সেতুর ওপর গাড়ি থামিয়ে মানুষজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি। কোন ধরনের আড্ডাও দেখা যায়নি। কোথাও কেউ থামলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সরিয়ে দেয়। এদিন পুরো সেতুজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় পদচারণা ছিল। সেই কড়াকড়ি বর্তমানেও রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সেতুতে মানুষের হাঁটা বন্ধ করা রাখা হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেতুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কড়া করে। পারাপারের সময় পদ্মা সেতুতে না নামার জন্য টোল প্লাজা এলাকায় মাইকিং করা হয়। সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করার পর জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা টোল প্লাজায় শৃঙ্খলা ফিরে। একই সাথে মাওয়ার টোল প্লাজায় ফিরে শৃঙ্খলা।
ওইদিন বাইক চলাচল বন্ধ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ২৬ জুন মোটরসাইকেল আরোহীদের কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এতে দুটি প্রাণ ঝরে। বাধ্য হয়ে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। সেতু সংশ্লিষ্ট সব মহল মিলে এই সিদ্ধান্ত হয়।
বাইক চলাচল বন্ধের পর থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহনের জট নেই জানিয়ে জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা একাধিক বাস চালক জানান, গত ২৬ জুন সেতু পারাপারে চাপ থাকলে এখন তা নেই। খুব সহজেই পদ্মা সেতু পার হচ্ছি। ঝামেলা নেই বললেই চলে। পারাপারে সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা রয়েছে। সেতুর কোথায় থামা যাচ্ছেও না। বাস চালক নাছির বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে। পারাপারে কোন ধরনের ঝামেলাই হচ্ছে না।
এদিকে, পদ্মা সেতু পার হতে না দেওয়ায় অনেক বাইকচালক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা আবিদ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুর সামনে ২৭ জুন বেলা ১১টায় যায়। কিন্তু সেতুতে আমার বাইক ওঠতে দেয়নি। পরে ফেরিঘাটে যাই। সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ফেরি দিয়ে পার হয়।
গত ২৭ জুন সেতুতে ওঠতে না পেরে ক্ষোভ নিয়ে বাসায় ফিরেন বাইক চালক নোমান। তিনি বলেন, থাকি ওয়ারিতে। মাদারিপুরে এক অসুস্থ স্বজনকে দেখতে যাওয়ার কথা। সময়ও বেশি নেই। এই সময়ের মধ্যে ভেবেছি সেতু যেহেতু অসুস্থ স্বজনকে দেখে তাড়াতাড়িই চলে আসা যাবে। কিন্তু সেতুতে ওঠতে দেয়নি। সেখানের দায়িত্বরত কর্মীরা ফেরিতে পারাপার হতে বলে। ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখি র্দীঘ লাইন। পরে ঢাকায় চলে আসি।
গত ২৫ জুন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর। যার মধ্য দিয়ে জনগণের অবসান হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষার। পরদিন ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়। এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি কারণে দুটি প্রাণ ঝরে যায়, পরে ওইদিন রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।
আনন্দবাজার/শহক