শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরুতে দুগ্ধশিল্পে সুবাতাস

গরুতে দুগ্ধশিল্পে সুবাতাস

দেশে গরু ও ছাগলের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গরুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ লাখ, আর ছাগল বেড়েছে প্রায় ৬১ লাখ। গরু আর ছাগলে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। এমন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষিশুমারির প্রাথমিক ফলাফলে। গেল ২০২০ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী, দেশে গত এক যুগে গরুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

বিবিএস সূত্রমতে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩। এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০। এক যুগ আগে ছাগলের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯।

দেশে গরু আর ছাগলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধের উৎপাদনও বেড়েছে। সূত্রমতে, ১৯৮৯-৯০ সালে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ৩৪ দশমিক ৬০ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে দুধের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টন। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ৮৫ হাজার লাখ টন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুধের মূল উৎস গরু। মোট উৎপাদিত দুধের ৯০ শতাংশ আসে গরু থেকে, ৮ শতাংশ আসে ছাগল থেকে এবং ২ শতাংশ আসে মহিষ থেকে। ২০২০ সালে মোট দুধের উৎপাদন হয়েছে ১০৭ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে দিনপ্রতি মাথাপিছু দুধের চাহিদা ২৫০ মিলিলিটার হলেও প্রাপ্যতা রয়েছে ১৭৫ মিলিলিটার। দেশে দুধের বার্ষিক চাহিদা ১৫২ লাখ টন। দেশে দুধ উৎপাদনের হার বছর বছর বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০৩১ সালে ২০০ লাখ টন এবং ২০৪১ সালে ৩০০ লাখ টন দুধ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে

আরও পড়ুনঃ  করোনায় খাদ্য সংকট হবে না, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে : খাদ্যমন্ত্রী

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০৩১ সালে ২০০ লাখ টন এবং ২০৪১ সালে ৩০০ লাখ টন দুধ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে। রাজশাহীর বিভাগে রাজশাহী জেলায় দুধ উৎপাদনে ঘাটতি আছে। রাজশাহীতে মাথাপিছু ২২০ গ্রাম করে মোট ৬ দশমিক ২ লাখ টন দুধ খেতে পারছেন। ২৫০ গ্রাম করে রাজশাহীতে বছরে দুধের চাহিদা ৭ লাখ টন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা দরকার। সেই হিসেবে দেশে দুধের চাহিদার তুলনায় উৎপাদনও বেশ কম। তা ছাড়া দুধ ফুটিয়ে পান করার ঝামেলা পোহাতে গিয়ে অনেকেই পান করা থেকে বিরত থাকেন। দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন।

দেশে প্রাণিসম্পদের ধারাবাহিক অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে দেশ। তবে, দুধ উৎপাদনে এখনো রয়েছে কিছুটা ঘাটতি। এখনো কোনো কোনো জেলায় দুধ উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। প্রাণি সম্পদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যেই দুধে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে।

রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকার খামারি মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, অন্য কাজের পাশাপাশি তিনি বাড়িতে তিনটি গাভী দিয়ে খামার শুরু করেছেন। ওই গাভীগুলো থেকে প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ বিক্রি করা হয়। এতে লাভের পাশাপাশি গরুর সংখ্যাও বছরে বাড়ছে। তবে, বিপরীত চিত্র জয়পুরহাটের। জয়পুরহাট প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি, এই জেলায় দুধ উৎপাদন হয় বছরে এক লাখ ৭৩ হাজার ৩৩০ টন। চাহিদা ৮৭ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হয় ৮৬ হাজার ৩০০ টন।

আরও পড়ুনঃ  সবজিতে সুখবর নেই

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেনে বলেন, আমরা দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি। আগামী বছরের মধ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাব। সারাদেশে মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। অনেক শিক্ষিত মানুষ এখন প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ করছে। তারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে যতটুকু সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে খামারিরা ততটুকু পাবেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন