ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মার ঢেউয়ে লেখা বিজয়গাথা

পদ্মার ঢেউয়ে লেখা বিজয়গাথা

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক তার ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। সঙ্গে ক্যাপশনে লিখেছেন- আমি তোমার ছায়ায় ছায়ায় থাকি মা, আমি তোমার চোখের তারায় বাঁচি মা, আমি তোমার মায়ায় মায়ায় থাকি মা, আমি তোমায় হাওয়ায় আবার ডাকি মা, আমি তোমায় ভালোবাসায় মুড়ে রাখি মা।

প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, পাশেই দাঁড়ানো মা শেখ হাসিনা। প্রমত্ত পদ্মার এলেমেলো হাওয়ায় শাড়ি পরা পুতুলের চুলগুলো উড়ছিল। এরপরই পুতুল মায়ের দিকে ঘোরেন। মাস্ক পরে থাকা পুতুল মাকে কিছু বলেন কি না তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। তবে তার আগেই মাথায় হাত দিতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে।

যে পাশ থেকে ভিডিওটি করা হয়েছে তার বিপরীত পাশে, কয়েক সেকেন্ড চুলে হাত রেখে নিজের মাথায় থাকা একটি কালো ক্লিপ খোলেন তিনি। পরে মেয়ের দিকে ঘুরে ক্লিপটি কিছুক্ষণ হাতে ধরে রাখেন শেখ হাসিনা। মায়ের হাতে ক্লিপ দেখে এলোমেলো বাতাসে উড়তে থাকা চুলগুলো দু’হাতে ঠিক করে এক হাত দিয়ে মায়ের হাতে থাকা ক্লিপটি নিয়ে নেন। তারপর খুব সাধারণ একটা বাঙালি মেয়ের মতো করেই ক্লিপটি মুখ দিয়ে একটু টেনে ধরে ঠিকঠাক করে মাথার পেছনের দিকে গুঁজে দেন। প্রধানমন্ত্রী ‘মা’ ততক্ষণে আবার সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে যান, ফেরেন প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ যতটা চেনেন, ব্যক্তি শেখ হাসিনা বা শেখ হাসিনার জীবনে মায়ের অংশটুকু সাধারণ মানুষের ততটা পরিচিত নয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে তিনি নিজের দৃঢ় সংকল্পের স্পষ্ট সাক্ষর রাখলেন ইতিহাসের পাতায়। উদ্বোধনের পর সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে বিমান বাহিনীর ‘ফ্লাইং ডিসপ্লে’ উপভোগ করছিলেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সেখানেই মা-মেয়ের নিবিড় সম্পর্কের একটা চিত্র ধরা পড়ল ভিডিও ফুটেজে।

মা মেয়ের সেলফি
পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তোলেন মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এরপরই প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীর বেশে হাস্যজ্জ্বল মুখে ভিডিও কলে কথা বলেন। ধারণা করা হচ্ছে এসময় তিনি ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন। বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে পদ্মা সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে মাওয়া পয়েন্টে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। সেখানেও মোনাজাতে যোগ দেন।

সেতুতে প্রধান টোল: পদ্মা বহুমুখী সেতু খুলে দেওয়ার পর প্রথম টোল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুতে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দেন তিনি। এর মধ্যে নিজের গাড়ির জন্য দিয়েছেন ৭৫০ টাকা। তার গাড়ি বহরে ১৮টি গাড়ি ছিল। দুপুর ১২টার একটু আগে মাওয়ায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যান। সেতু টোল কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীই প্রথম ব্যক্তি, যিনি টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়েছেন।

জাজিরা প্রান্ত: জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সেখানে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে ‘জয় বাংলা’ বলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। পরে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের কর্মসূচি শেষে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন। জনসভায় যোগদান শেষে জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া-২তে যান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে আসেন।

সর্বনাশা পদ্মা নদী: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণার পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কাঁঠালবাড়িতে অবস্থিত জনসভাস্থলের লোকজন। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে কাঁঠালবাড়ির জনসভাস্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। এর আগে পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত ও জাজিরার নাওডোবা প্রান্তের উদ্বোধন কার্যক্রম শেষ করেন। এসময় মঞ্চে বাজানো হয় আব্দুল আলীমের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’। এরপর বাজানো হয় ‘ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’ গানটি। গান শেষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে জনসভাস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।

প্রধানমন্ত্রী যখন পদ্মা সেতু অতিক্রম করেন, তখন বিমানবাহিনীর ছয়টি হেলিকপ্টার তাকে অভিবাদন জানায়। এরপর হেলিকপ্টারগুলো কাঁঠালবাড়ি ঘাটে জনসভা মঞ্চের ওপর দিয়ে চক্কর দেয়। এর একটিতে জাতীয় পতাকা, একটিতে বঙ্গবন্ধু, একটিতে প্রধানমন্ত্রী, পদ্মা সেতু, আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা বহন করছিল। আরেকটি হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছিটিয়ে জনসভায় আসা মানুষদের অভিবাদন জানানো হচ্ছিল।

সেতুর ওপর হাজারো মানুষ: উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। এসময় অনেকে হেঁটে পদ্মা সেতুতে উঠে পড়েন। পদ্মা সেতুতে উঠে সবাই মোবাইলে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পালং থানার গয়ঘর থেকে আসা রাজীব চৌধুরী নামে এক যুবক জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতুতে ওঠার। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো। সেজন্য আমরা মহাখুশি। এখুশি বলে বুঝাতে পারবো না।

পদ্মা সেতু নিয়ে সারাদেশের মানুষ যখন উচ্চসিত। সমাবেশ স্থলে যাওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে ছিলেন, সেখানে ভিন্ন খবরের শিরোনাম হয়েছেন শরীয়তপুরের ৩ এমপি। করোনা পজিটিভ হওয়ায় জনসভায় যোগ দিতে পারেননি তারা। এরা হলেন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক।

গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে করোনা পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিজেরাই। তারা লিখেছেন, আজ (গতকাল শনিবার) বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠান সফল করার লক্ষ্যে আমরা গত এক মাস যাবত কাজ করে যাচ্ছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য (তিন দফা করোনা পরীক্ষা করি) গতকাল রাতেও আমাদের তিনজনেরই কোভিড পজিটিভ হওয়ার কারণে আমরা অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারছি না। ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের মানুষকে এমন একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের জন্য।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন