- হগ্গলি প্রতারণা করলো
মফিজ খলিফা (৮০)। জীবনের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে ফরিদপুরের রেলস্টেশনই যার বাড়ি-ঘর। খাওয়া-দাওয়াও এ রেলস্টেশনটিতে। কখনো খেয়ে কখনোবা না খেয়েই দিন কাটে তার। যেটুকু মাথা গোঁজার ঠাই ছিলো দুবেলা খাবার দেওয়ার কথা বলে সেটুকু কেড়ে নিয়েছে চাচাতো ভাই আনার খলিফা। দুনিয়াতে আপন বলতে নেই কেউ আর। বড় একা সে।
এ বৃদ্ধের পৈতৃক বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কানাইপুর গ্রামে। স্বপ্ন বুনতে যৌবনে সেখানে বিয়ে করে বাসা বাঁধলেও নিষ্ঠুর কপাল ভেঙে সুখ পাখিটাও একদিন উড়ে যায় তাকে একা করে। দুটি সন্তান ছিলো এ বৃদ্ধের। তার একটি পানিতে ডুবে মারা যায় আর অন্যটি খেঁচুনি রোগে পরপারে পাড়ি জমান। এরপর আপন স্ত্রীও একা করে ছেড়ে চলে যায় তাকে। সেই থেকেই পথে পথে ঘুরছে এ বৃদ্ধ। কখনো ভিক্ষাবৃত্তি কখনোবা মানুষের দুয়ারে হাত পেতে চলছে জীবন তার।
জীবনের তাগিদে ১০ বছরের আগে নিজ এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমান পাশ্ববর্তী ফরিদপুর জেলায়। এখানে ভিক্ষা করে কোনোরকমে চলছিল তার জীবন। তবে, বয়সের ভারে এখন আর সেভাবে চলাফেরা করতে পারেননা এ বৃদ্ধ। তাইতো মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফরিদপুরের রেলস্টেশনটি।
ধর্মপরায়ণ এ বৃদ্ধ যাতে রেলস্টেশনের মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারেন। সাথে রেলস্টেশনে আসা যাত্রীদের দয়ায় বেঁচে থাকতে পারেন সেজন্যই বেছে নিয়েছেন এ রেলস্টেশনটি।
বৃদ্ধ মফিজ খলিফা বলেন, ‘বাহে জীবনে হগ্গলি (সবাই) আমার লগে (সঙ্গে) প্রতারণা করলো। কেউই কতা (কথা) রাহেনি (রাখেনি) বাহে। মাথা গোঁজার যেটুকু ঠাই ছিলো দুবেলা দুমুঠো খাবার দেওয়ার কথা বলে তা-ও কেড়ে নিয়েছে চাচাতো ভাই আনার খলিফা। মাথা গোঁজার সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে দু’চারদিন খাবার দিয়ে পরে বাড়ি থেকে বের করে দেয় চাচাতো ভাই। সেই থেকে পথে পথে ঘুরছি আমি। পৃথিবীতে আমার আপন কেউ নাই।
এ বৃদ্ধ বলেন, বিচার দিয়েছি আল্লাহর কাছে। হাশরের ময়দানে সবার বিচার হবু। তখন কেউই রেহাই পাবুনা।
এদিকে, কিছুদিন আগে এই বৃদ্ধের খোঁজ পায় ফরিদপুরের সমাজকল্যাণমূলক ‘আমরা করবো জয়’ নামের একটি সংগঠন। পরে এ সংগঠনটির পক্ষ থেকে রেলস্টেশনটির পাশ ঘেঁষে একটি ছোট ছাপড়া ঘর করে দিয়েছে রাত যাপনের জন্য। সারাদিন রেলস্টেশনে বসে দিন কেটে রাতে সেখানে কিছুটা সময় মাথা গুঁজেন এই বৃদ্ধ।
ফরিদপুরের সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন ‘আমরা করবো জয়’ এর সভাপতি আহমেদ সৌরভ বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে খোঁজ পাই ওই বৃদ্ধের। পরে যেয়ে দেখি ওই বৃদ্ধ রেলস্টেশনের পাশের রাস্তায় শীতে কাঁপছে। আমরা পরে ওই বৃদ্ধের সাথে কথা বলে রেলস্টেশনের পাশে ছোট একটি দোকানঘর করে দিয়েছি। যাতে সে একটু মাথা গুঁজার ঠাই পায়।
আহমেদ সৌরভ বলেন, ‘ওই বৃদ্ধের খাওয়ার জন্যও রেলস্টেশনের পাঁশের একটি হোটেলকে বলে দিয়েছি। যাতে না খেয়ে থাকতে না হয় ওই বৃদ্ধের। এছাড়া মসজিদে গিয়ে যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য একটি হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছি আমাদের সংগঠনটির পক্ষ থেকে।