বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে
–ড. আহসান এইচ মনসুর
সরকারের ঘোষিত বাজেট প্রস্তাবনায় বিশাল ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ঋণের ওপরই নির্ভর করছে সরকার। জিডিপির ৫.৫ শতাংশ বা ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক থেকে নেবে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে যা ছিল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। আর বর্তমানে ৫/৬ ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের অবস্থা দুর্বল। ফলে ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা রাখে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
গতকাল রবিবার গুলশানের একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অয়োজিত বাজেট পরবর্তী প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
ব্যাংকগুলো থেকে সরকার এতো টাকা নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। মূল আলোচনায় প্রস্তাবিত বাজেটে দুটি বড় সমস্যা সামনে এসেছে বলে উল্লেখ করেন ড. আহসান। তিনি বলেন, আমদানি বাড়ায় যে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা ডলারের বাজারকেও অস্থির করে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে কাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এগুলোর পেছনে যুদ্ধের প্রভাব, বৈদেশিক আয় কমে যাওয়া ও অর্থিকনীতির দুর্বলতা রয়েছে।
তাছাড়া বাজেটে ৩টি অনিশ্চয়তা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এরমধ্যে প্রথমেই রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের বিষয়টি। গতবছর যেখানে এনবিআর তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি সেখানে করপোরেট কর হ্রাস করে নতুন করে আয় বাড়ানো চ্যালেঞ্জ হবে। দ্বিতীয়ত, বাড়তে খাতা ভর্তুকির সংস্থান করাও একটি চ্যালেঞ্জ। এখাতে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে ফলে এটার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। তৃতীয়ত বিশাল ঘাটতি সমন্বয় করা। বিদেশি ঋণের সুদ সামনের বছরগুলোতে আরো বাড়বে।
প্যানেল আলোচয় অংশ নিয়ে এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে ২০১৯-২০ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দারিদ্রের হার ১২.৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। এটা কতটা বাস্তব তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে ফলে সেভাবে আয়কর কাঠামো তৈরির পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ। প্রতিযোগি দেশগুলো-কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের তুলনায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কম বলে জানান তিনি। মূল্যবৃদ্ধির এ সময়ে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি আরো প্রসারিত করার আহ্বান জানান তিনি।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, আলোচিত তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিদেশি অর্থয়নের প্রকল্প আরো কমানো যেত বলেও মত দেন তিনি। করপোরেট কর হ্রাসের পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিপরীতে ল্যাপটপের ওপর কর ধরা হয়েছে। তাছাড়া বাজেটে ডিজিটাল পেমেন্ট নিয়ে কিছু বলা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন এ আইটি উদ্যোক্তা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সরকার গরীবদের কথা ভেবে গৃহহীনদের ঘরও নির্মাণ করে দিয়েছে। দেশ উপরে উঠেছে এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই জানিয়ে তিনি সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে আড়ালেও নায়ক বলে অভিহিত করেন। তাছাড়া মতভেদ থাকলেও কেউ যেন কারো গলা টিপে না ধরে এবং অর্থনীতিকে আঘাত না করে সে আহ্বান জানান।
আমেরিকান চেম্বার সভাপতি সায়েদ এরশাদ আহমেদের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশগ্রণ করেন। এ সময় এরশাদ আহমেদ আমদানি করা কাচাঁমালেও ওপর করপ্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি সব সেক্টরে অটোমেশনের দাবি করেন। তবে এনবিআর এ ক্ষেত্রে মনযোগ দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশিাপাশি ই-পেমেন্টে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান এ ব্যসসায়ী নেতা।
আনন্দবাজার/শহক