ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করমুক্তসীমা বাড়ানো প্রয়োজন

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিসিসিআই
  • মূল্যস্ফীতির সঙ্গে রাখতে হবে সামঞ্জস্য
  • করপোরেট করহার হ্রাসে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে

বাজেটে করপোরেট করহার হ্রাস করায় বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। এতে করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, প্রবৃদ্ধিও অর্জন হবে এবং রপ্তানি বহুমূখীকরণ সম্প্রসারিত হবে বলে জানান চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত আয়কর মুক্তসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলেও জানান সংগঠনটি। গত বৃহস্পতিবার চট্রগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে পর্যালোচনায় সংগঠনটি সভাপতি এসব প্রতিক্রিয়া জানান।

সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাজেটে করপোরেট করহার হ্রাস করায় বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। এতে করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, প্রবৃদ্ধিও অর্জন হবে এবং রপ্তানি বহুমূখীকরণ সম্প্রসারিত হবে। তবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেই অনুপাতে ব্যক্তিগত আয়কর মুক্তসীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি এ বাজেট করোনা মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এবং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন।

মাহবুবুল আলম বলেন, বাজেটে ব্যয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, আয় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭শত ৯৩ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যা সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাটতি মোকাবেলায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

বাজেটে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

ট্রেডিং পণ্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে যা ইতিবাচক। ম্যানুফ্যাকচারারদের নিকট কাঁচামাল সরবরাহে উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। পারকুইজিট খাতে অনুমোদনযোগ্য ব্যয় সীমা ৫ লাথ ৫০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হলে প্রদেয় করের ৫ শতাংশ রেয়াত দেয়া হবে যা প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।

এক বা একাধিক উৎপাদনস্থলের ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণের শর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন গ্রহণ করার বিধান আমরা স্বাগত জানাই। উৎসে ভ্যাট কর্তনের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কর্তৃক হ্রাস সংক্রান্ত সমন্বয় গ্রহণের সময়সীমা ২ কর মেয়াদ হতে বৃদ্ধি করে ৪ কর মেয়াদ করা হয়েছে যা ভ্যাটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ চলাচল উৎসাহিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করা হয়েছে। যা এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগে আশা যোগাবে।

এছাড়া নির্ধারিত তারিখে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ করতে না পারার জরিমানা ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে রাজস্বের সমপরিমাণের অর্ধেক জরিমানা প্রস্তাব করা হয়েছে যা ব্যবসাবান্ধব। আইসিটি খাতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের টার্নওভার করহার দশমিক ৬ শতাংশ এর পরিবর্তে দশমিক ১ শতাংশ করা এই উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে। বিনিয়োগজনিত আয়কর রেয়াতের হার রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

স্টিলজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল এবং অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে করহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা, স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর বিলোপ এসব পণ্যের মূল্য হ্রাস করবে। তবে ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানী করদাতার জন্য ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ১ শতাংশ করা হয়েছে যা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

তৈরিপোশাক শিল্পের মত অন্যান্য সকল রপ্তানিমূখী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই হারে কর ধার্য্য করার ফলে রপ্তানি পণ্য বহুমূখীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরবরাহের বিপরীতে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা এবং মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন করলেও রেয়াত প্রদান ব্যবসায়িক কর্মকান্ড সহজ করবে। ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার আমদানিতে ১০ শতাংশ এবং ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে ব্যবহৃত টোনার, প্রিন্টার ইত্যাদি আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি। দেশে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটর গাড়ী উৎপাদনে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করবে।

পাইকারী ব্যবসায় কতিপয় ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। কৃষি পণ্য, ফিশ ও পোল্ট্রি ফিড, পোল্ট্রি ফার্মের যন্ত্রপাতি, চিনি, ইস্পাতের কাঁচামাল, কাগজ ও কাপড় ইত্যাদি পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ এর চিলার আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে উল্লেখিত পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করি, এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাংখিত উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন