নদীরক্ষা————
আমাদের দেশে ‘নদী রক্ষা’ আইন আছে, কিন্তু সে আইন কেই মানে না; মানতে বাধ্যও করা হয় না। গত ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। সে রায়ে নদী দখলদারদের নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এর পর কোন নদী দখলকারী, নদী হন্তারক কোন শিল্পপতির ঋণ নদী দখল দুষণের কারনে বন্ধ রয়েছে তা আমাদের জানা নেই। কোন রাজনৈতিক নেতা নদী দুষণ, দখল করার অপরাধে নির্বাচন করতে পারেননি এমন নজরিও নেই দেশে। হয়তো কোন শিল্পপতি কিংবা রাজনৈতিক নদী দখল দুষণের সাথে জড়িত নন। তাহলে নদী দুষণ-দখল করছে কারা? হাইকোর্টের রায়ের পর নদী দখল দুষণ কোনটাইতো কমেনি বরং বেড়েছে! বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐতিহাসিক সে রায় এখনো কার্যকর হয়নি; কোন দিন হবেওনা হয়তো।
দেশের নদী দখল এবং দূষণ মুক্ত করতে অনেকের মুখেই নানা কথা শোনা যায়; মাঝেমাঝে নদী রক্ষায় রাষ্ট্রীয় হম্বিতম্বি হয় কিন্তু নদীরক্ষায় কাজ খুব কমই হয়। এ দেশের নদী হন্তারকরা দুর্বল নয়। বেশ হোমরা-চোমরা। তাই দু-একটি লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান ছাড়া নদীখোরদের টিকিও ছুঁতে পারছে না কেউ। তাই নদীগুলো দখল এবং দূষণ মুক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করেরাজধানী ঢাকা ঘিরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা আর বালু নদীর অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন।
ঢাকার চারপাশের চার নদী- বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা আর বালু। এই নদীগুলো ঢাকার প্রাণ। দূষণ দখলের কবলে থেকে রাজধানীর কোল ঘেঁষা নদীগুলোকে আর বাঁচানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দূষণ বাড়ছে, বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যা। রাজধানী ঢাকার পরিবেষ্টিত নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার শত চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, র্যালি কোনো কিছুই কাজে আসছে না। এই নদীগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক লেখালেখি হয়েছে, টেলিভিশনেও সংবাদ সম্প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। শঙ্কার কথা এই যে, রাজধানীর কোণঘেঁষা এসব নদী না বাঁচানো গেলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে, ঘটতে শুরুও করেছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে। এখনই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
প্রতিটি সরকারই আশ্বাস দিয়েছে অবৈধ দখলমুক্ত এবং নদীর দূষণ দূর করে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানোর। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। নদী পারাপার হতে এখন নাকে রুমাল চেপে রাখতে হয়। দূষিত পানির তীব্র গন্ধে পেট মোচড় দিয়ে ওঠে। কোথাও নদীর পানিকে পানি বলে মনে হয় না। মনে হয় পোড়া মবিল। এর ওপর দিয়ে মাঝি তার নৌকা বাইছেন। দূষিত হতে হতে পানি তার স্বাভাবিক ঘনত্বটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে অনেক নদীতে আগে থেকেই মাছ নেই। শীতলক্ষা ও বালুতে মাছ ধরতে জেলেদেও দেখা যায় না। মাছ থাকার মতো অবস্থা নেই। অথচ এই শীতলক্ষাতে ইলিশ পর্যন্ত মিলতো। শীতলক্ষার পানি দিয়ে একসময়কার বিখ্যাত সোডা ওয়াটার পর্যন্ত তৈরি হতো। বোতলের গায়ে লিখা থাকতো মেড বাই শীতলক্ষা ওয়াটার। তখন স্থানীয়রা মনে করতো শীতলক্ষার পানি পান করলে রোগবালাই ভালো হয়ে যায়। এখন মুখের সামনেই সেই পানি নেয়া যায় না। হাত চুলকায়। আমাদেও নদীগুলো এখন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। পলিথিন, ট্যানারিসহ শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্যে ভরপুর নদীর পানি। এক সময়ের প্রমত্তা এসব নদীর পানিতে স্রোত নেই। এগুলোকে মরা নদী বললে অত্যুক্তি হবে না।
নদী তীরের আন্দোলনকারী মানুষের শত চিৎকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তা বাবুদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। সরকারও নিচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। আমাদের নদীগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নদী নিজে নিজে সংকুচিত হয় না; নদীকে সংকুচিত করা হয়। নদীর পানি রাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্বিচারে দূষিত করে ফেলা হচ্ছে টল টলে নদীর পানি। এক শ্রেণির নদী হন্তারক প্রতিনিয়তই তা করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের খবর, স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদ, পরিবেশবাদীদের আহ্বান এবং প্রকৃতির কান্না কি সরকার শুনছে? নদীর শত্রুরা কি সরকারের ক্ষমতার চেয়েও অধিক ক্ষমতাশালী? তা না হলে তাদের কেন রোধ করা হচ্ছে না?
দেখা গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জড়িত এবং সাধারণ মানুষ ও নদী ক্ষতির শিকার। ক্ষমতা বদলের পালায় বরাবরই ক্ষমতাসীনদের যাঁতাকলে নদীগুলো নিষ্পেষিত হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগসহ সারা দেশের নদী ভরাট, স্থাপনা তৈরি এবং নদীর তীরে বা অংশে ইট, বালু, পাথর, বাঁশ প্রভৃতি ব্যবসার ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তার পরোয়া করছে না দখলদাররা। আদালতের কাজ আদালত করেছেন, দখলদার করছে দখলের কাজ। প্রশ্ন হচ্ছে, আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সরকার কার হয়ে কাজ করছে; চোরের না সাধুর? ঢাকার চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার দূষণ ও নদীর ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থমূলক রিট মামলা দায়ের করেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।
এর রায়ে ঢাকার চার নদী রক্ষায় নয়টি নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে : সিএস ও আরএস মানচিত্র অনুসারে ঢাকার চারটি নদীর সীমানা জরিপের কাজ করতে হবে। একই সময়ের মধ্যে নদীগুলোকে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং তার পরের ছয় মাসের মধ্যে নদীগুলো রক্ষায় দরকারি নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে। নদীর সীমানা স্তম্ভ বসাতে হবে এবং নদী-সীমানায় পায়ে চলা পথ নির্মাণ ও বৃক্ষ লাগাতে হবে। একই সময়ের মধ্যে নদীর ভেতরে থাকা সব ধরনের স্থাপনা সরাতে হবে। ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠন করতে হবে।
ঢাকা মহানগরের চারপাশের চারটি নদী খনন ও পলিথিন থলেসহ অন্যান্য বর্জ্য ও পলি অপসারণ করতে হবে। আদালতে পরিবেশ সংক্রান্ত বিচারাধীন মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নিতে হবে। পুরান ঢাকার বাকল্যান্ড বাঁধসহ নদীর তীরের সব সরকারি ভূমি থেকে দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনা সরাতে হবে। যমুনা-ধলেশ্বরী, ধলেশ্বরী-বুড়িগঙ্গা, পুরনো ব্রহ্মপুত্র-বংশী, বংশী-তুরাগ, যমুনা-পুংলীখাল, তুরাগ ও টঙ্গী খাল খনন করতে হবে। এ রায়ের বাস্তবায়িত হয়েছে যৎসামান্যই। এখন পর্যন্ত ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠিত হয়নি। এ দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে, নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দেশের সব নদীর উন্নতি করার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) গড়িমসি করছে। তাদের ঢিলেমির সুযোগ নিয়েই নদীর বুক ও পাড় থেকে সরছে না অনেক স্থাপনা। এমনকি বিআইডব্লিউটিএ নিজেই কামরাঙ্গীরচরের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর ভেতরে একটি উদ্ধার করা প্রায় দুই একর জায়গায় বিনোদন কেন্দ্র তৈরির কাজে হাত দিয়েছিল। এটা বন্ধ করতে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ঢাকার চার নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে এর আগে হাইকোর্ট রায় দেন। নদী উদ্ধারের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য।
বিআইডব্লিউটিএ নিজেই নদীর ভেতর বিনোদন কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা বেআইনি ও হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পরিপন্থি। ওই রায়ে বুড়িগঙ্গা নদীর ভেতর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়নাধীন বিনোদন কেন্দ্র অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত এক মাসের মধ্যে সেটি অপসারণ করতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও পরিচালককে নির্দেশ দেন। মাস গড়িয়ে বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে সে রায় কার্যকর হচ্ছে না কেন? মানুষের অসচেতনতা ও অপরিকল্পিত কার্যকলাপের কারণে নগরের চারপাশে থাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে বর্জ্য আসছে একাধিক উৎস থেকে।
নদীতে বা তীরে আবর্জনা ফেলা, নর্দমা দিয়ে নদীতে বর্জ্য যাওয়ার কারণেনগরের নদীগুলো দূষিত হচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ও ঢাকা ওয়াসার ৪২টি নর্দমা দিয়ে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য যাচ্ছে। নগরের ৭০ ভাগ পয়োবর্জ্য চারপাশের চার নদীতে যাচ্ছে। এসব নদী তীরের দুই হাজারেরও বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য নদীতে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য। হাজারীবাগের প্রায় ১৮৫টি চামড়া শিল্প কারখানা প্রতিদিন গড়ে ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নির্গত করছে। এই বর্জ্য মূলত বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত করছে। বেশির ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও বংশী নদীতে অপসারিত হচ্ছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নদ-নদী ও অন্যান্য দূষণ বন্ধে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি বসাতে হবে। আবার ঢাকা মহানগরের হাজারীবাগ থেকে চামড়া পাকা করার কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এসব কার্যক্রমে কোনো গতি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে পুরান ঢাকার আশপাশে বুড়িগঙ্গা তীরে পুলিশ প্রহরা বসানোর কথা বলেছেন আদালত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা করা হচ্ছে না। ফলে আগের মতোই বুড়িগঙ্গা তীর ও এর ভেতরে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে পলিথিন ওঠানোর সরকারের কার্যক্রমও যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। দূষণে দূষণে ভারী এই নদীর পানিতে তখন দুর্গন্ধের মাত্রাও থাকে বেশি। জলে, মলে ও শিল্প বর্জ্যে একাকার বুড়িগঙ্গায় গোসল করাও দায়! ভরা বর্ষায় বুড়িগঙ্গার গতি কিছুটা বাড়লেও এর দূষণ আর কমে না।
মৃত বুড়িগঙ্গা থেকে পানি সংগ্রহ করে তা আর সুপেয় করার সুযোগ পাচ্ছে না ঢাকা ওয়াসা। সেই সুযোগ তৈরিতে এবার যমুনা নদী থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ১৬৩ কিলোমিটার নদীপথ খনন করা হবে। যমুনা থেকে ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশী-তুরাগ হয়ে বুড়িগঙ্গায় আসবে পানি। এ
প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পানি দূষণ মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার নৌপথ সচল হবে। তবে খরস্রোতা ও টলটলে পানির বুড়িগঙ্গা দেখতে আরও বছর তিনেক অপেক্ষা করতে হবে নগরবাসীকে এমনটাই আশা ছিলো। তা কিহয়েছে। নদীর টলটলা পানি এখন অনেকটা স্বপ্নের মতো। কেবল রাজধানী ঢাকার পাশের নদী রক্ষা নয়; এ মুহূর্তে সারা দেশের নদীগুলোকে নদী হন্তারকদের হাত থেকে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। মানুষখেকো হিংস্র বাঘের চেয়েও ভয়ংকর নদী খেকোরা।
বাঘ মানুষ খেলে একজনের প্রাণ যায়; কিন্তু একটি নদী দখল হলে হাজার হাজার মানুষের জীবন হয়ে পড়ে বিপন্ন। নদী খেকোরা বিত্ত বৈভবের সাগরে ডুবে থাকতে প্রকৃতির সম্পদ নদ-নদী দখল করে পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাবে সাধারণ মানুষ, প্রাণীকূল, উদ্ভিদ বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্ত এবং নদী খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় নানা চেষ্টা করে তাদের লাগাম টানা যাচ্ছে না। একদিকে উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত পানি তুলে নেয়ায় দেশের শত শত নদী শুকিয়ে গেছে; অন্যদিকে নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলায় সংকুচিত হচ্ছে এবং নদীর পানি হয়ে পড়েছে ব্যবহারের অনুপযোগী।
কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পানিশূন্য নদীর কোথাও কোথাও চলে চাষবাস। খনন না করা ও দখলদারদের থাবায় নদীর নাব্যতা যেমন কমছে, ঠিক একইভাবে কমছে নদীর সংখ্যাও। নদী গবেষকরা বলছেন, ষাটের দশকে সাড়ে সাতশো নদী ছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে মাত্র ২৩০টিতে দাঁড়িয়েছে। ৫০ বছরে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী। যেসব নদী অস্তিত্বের জানান দিয়ে এখনো টিকে আছে শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে বদলে যাচ্ছে নদীগুলোর গতিপথ, শুকিয়ে মরে যেতে যেতে দেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী। সারা দেশের মরে যাওয়া নাম হারানো নদীগুলোকে ফিরে পাওয়া আর সম্ভব নয়। নদী রক্ষায় আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে। এজন্য চাই টেকসই
পরিকল্পনাভিত্তিক প্রকল্প। নদী রক্ষায় এবং নদী খননে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আগের তুলনায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ এখন চোখে পড়ছে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে আরও সজাগ হওয়া প্রয়োজন।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক
আনন্দবাজার/শহক