শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হতাহতদের স্মরণে সংসদে শোক

হতাহতদের স্মরণে সংসদে শোক

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ নিয়ে সংসদে আলোচনা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদ। গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। স্পিকার বলেন, গতকাল রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে। ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। একইসঙ্গে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে মহান জাতীয় সংসদ।

এর আগে অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করেন। এবার অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- শাসমুল হক টুকু, এবি তাজুল ইসলাম, মুহিবুর রহমান মানিক, মুজিবুল হক চুন্নু ও শামীমা আক্তার খানম। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে এদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।

সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়নের পর স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক সংসদ সদস্য জুবেদ আলী, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, বিএম নজরুল ইসলাম, শাহ জিকরুল আহমেদ, খন্দকার আবদুল জলিল, আশিকা আকবর, পারভীন সুলতানার মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়।

যেভাবে ফায়ারকর্মীরা নিহত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মী। কনটেইনার ডিপোর আগুন নেভানোর সময় বিস্ফোরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আছেন আরও ফায়ার কর্মী। এ ছাড়া সিএমএইচএ ভর্তি আছেন ১৫ কর্মী। গতকাল রবিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান।

আনিসুর রহমান বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস প্রথমে কনটেইনার ডিপোতে যায়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কনটেইনারের খুব কাছ থেকে পানি নিক্ষেপ করছিলেন। ‘জ্বলন্ত পানি নিক্ষেপ করতেই হঠাৎ বিকট শব্দে কনটেইনার বিস্ফোরণ ঘটে। কনটেইনার বিস্ফোরিত হওয়ার পর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মী মারা যান এবং সাত জন আহত হন। মৃতদের মধ্যে একজনের নাম মনিরুজ্জামান। তিনি কুমিরা ফায়ার স্টেশনে নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো নিখোঁজ আছেন ফায়ার সার্ভিসের আরও পাঁচ জন। এ ছাড়া সিএমএইচএ ভর্তি আছেন ফায়ার সার্ভিসের ১৫ কর্মী।

আরও পড়ুনঃ  চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গেল পণ্যবাহী বিশেষ ট্রেন

তিনি বলেন, ‘আমাদের পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে আরও দুই জনের জামা-কাপড় ও জুতা দেখে মনে হচ্ছে তারাও ফায়ার সার্ভিসের লোক। কিন্ত তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মনিটরিং টিমের অবহেলায় দুর্ঘটনা: নৌ-প্রতিমন্ত্রী

মনিটরিং টিমের অবহেলার কারণে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।  গতকাল রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য যেসব অংশীজন আছে, আমরা একসঙ্গেই আছি। প্রাথমিকভাবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে যেহেতু কিছু নীতিমালা, বিধিমালা, আইন-কানুন মেনেই প্রাইভেট কন্টেইনার ডিপো সেটা এখানে আছে, আমি মনে করছি তাদের এখানে অবহেলাটা প্রাথমিকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।  তারা এখানে যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থা নিত তাহলে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।  আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস কোড (আইএমডিজি) এবং আন্তর্জাতিক জাহাজ এবং বন্দর সুবিধা নিরাপত্তা কোড (আইএসপিএস) অনুযায়ী কন্টেইনার ডিপো পরিচালনা করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না।

হতাহতদের কোটি টাকা বরাদ্দ

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের জন্য নগদ ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের দাফন-কাফন ও সৎকার এবং আহতদের চিকিৎসার্থে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। গতকাল রবিবার ‍দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেন জানান, এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে শুকনো অন্যান্য খাবারের ১ হাজার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষকের হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করলো সন্ত্রাসীরা

করা হবে ডিএনএ টেস্ট

মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠাচ্ছে। সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

ডা. সামন্ত লালের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞ টিম

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের চিকিৎসা দিতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একটি টিম চট্টগ্রাম যাচ্ছে। আজ সোমবার এ টিম চট্টগ্রাম পৌঁছাবে। গতকাল রবিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি। টিমের অপর দুই সদস্য হলেন- ডা. হেদায়েত আলী খান ও ডা. হোসেন ইমাম।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের এক সদস্যসহ দুইজন আমাদের এখানে চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা তাদের শঙ্কামুক্ত বলতে পারি না। ঘটনার পর থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। চট্টগ্রামের একজন সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রফিকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি।

অনুমতি ছিল না বিএম কনটেইনারের!

বিএম কনটেইনারের হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিলো না বলে জানিয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। পরিদপ্তর বলছে, তাদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি তালিকায়ও নেই এ প্রতিষ্ঠানের নাম।

ফায়ার সার্ভিস ও ডিপো সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্মার্ট গ্রুপের বিএম কনটেইনার ডিপোসহ অন্য সব ডিপোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে ত্রুটি। দাহ্য পদার্থ আমদানিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কড়াকড়ি নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। বিএম কনটেইনার ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটির কথা জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মচারীদের কাছ থেকে।

আরও পড়ুনঃ  ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন সাংবাদিক গোলাম রসূল

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, কনটেইনারে আমদানি করা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। ফলে দ্রুত বিস্ফোরণ হয়েছে। যদিও গতকাল রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ডিপোর মালিক বা কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি। মালিকপক্ষের কেউ না থাকায় কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ কারণে তারা উদ্ধার তৎপরতায় বেকায়দায় পড়েন। সরেজমিনে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কনটেইনার ডিপোটির মালিকপক্ষের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

একটি আইসিডিতে কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি থাকতে হবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে শর্তাবলি নির্ধারণ করা রয়েছে। এসব শর্ত না মানলে লাইসেন্স স্থগিত রাখারও সুপারিশ করেছিল নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি। আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার শর্ত থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তার অনেকটা মানেনি বলে জানা গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন