ঢাকা | রবিবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিবেশ পদকে ভূষিত হলেন রঞ্জিত বর্মন

মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস-এমডব্লিউইরের ফরেস্ট, এনভাইরনমেন্ট, টুরিজম, এনিম্যাল এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্চ অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি রঞ্জিত কুমার বর্মন জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২২ এ ভূষিত হয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা কর্তৃক বিভাগীয় সম্মাননা অর্জন করেছেন।

তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় সিনিয়র শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক। রঞ্জিত দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ, শিক্ষা ও সামাজিক ও মানব-উন্নয়নে কাজ করছেন।

রবিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে পদক তুলে দেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, এনডিসি। জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষ অনুষ্ঠিত সভায় সভাপ্রদান ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার।

সম্প্রতি এমডব্লিউইরের ‘প্রাক শিক্ষাবাজেট: উন্মুক্ত আলোচনা’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে ‘উপকূলে কেমন বাজেট প্রয়োজন’ শীর্ষক বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ১৯টি জেলা উপকূলীয় এলাকায়। এগুলোর মধ্যে এক একটি এলাকার বৈশিষ্ট্য এক এক রকম। সে হিসাবে উপকূলকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক পূর্ব উপকূল দুই মধ্য উপকূল ও তিন পশ্চিম উপকূল।

তার দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে, ১. উপকূলীয় মন্ত্রণালয় গঠন বা উপকূলীয় বোর্ড গঠন করা।
২. সমগ্র উপকূলের প্রধান সমস্যা অধিকাংশ এলাকায় টেকসই বেড়ীবাঁধ না থাকা। ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধের কারণে বা নদী ভাঙ্গনের কারণে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মানুষ স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ কারণে প্রয়োজন টেকসই বেড়ীবাঁধ এবং বাঁধ সংস্কারে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ রাখা।
৩. নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদী, বন্যা ও বাধ ভাঙ্গন লেগেই আছে। এ সকল কারণে মানুষের ফসলী জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। নদী ড্রেজিং করা ও নদী গর্ভে চলে যাওয়া জমির মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণে প্রযোজনীয় অর্থ বরাদ্ধ রাখা প্রয়োজন। বাঁধের ডিজাইন পরিবর্তন ও আরও বেশী বেশি চর বনায়ন প্রয়োজনীয় অর্থ রাখা।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলের মিষ্টি পানির সংকট রয়েছে। মিষ্টি পানির আধার সংরক্ষণে খাল খনন ও পুনঃখনন এবং সুপেয় পানি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ রাখা প্রয়োজন।
৫. জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সঙ্গি হয়ে গেছে। এ জন্য সমগ্র উপকূলবাসীর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন প্রতিনিধি ওয়ার্ডে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ। যেখানে থাকবে নারী-পুরুষের পৃথক থাকার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারীদের উঠা নামার জন্য প্রতিবন্ধী বান্ধব উপকরণ সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা, সোলার লাইট স্থাপন, র‌্যাম সিড়ি, সংযোগ সড়ক স্থাপনসহ গবাদি পশুর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় কক্ষ নির্মাণ।
৬. উপকূলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছোট একটি অংশের শিশুরা পরিবারের আর্থিক দুরবস্থাহেতু জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সময়ে নদীতে পোনা ধরে আয়ের উৎস হিসাবে। উপকূলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নে শিশুদের উপবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করা স্কুলে দুপুরে সরকারিভাবে খাদ্যের ব্যবস্থা করা।
৭. উপকূলের একটি অন্যতম সমস্যা লবণাক্ততা। যার ফলে কৃষি ও মানুষের সুপেয় পানি সংকট। লবনাক্ততার প্রভাবে এলাকায় মানুষের চর্মরোগ, পেটেরপীড়া, নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা লেগে থাকে। এ ক্ষেত্রে সমগ্র উপকূলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নদীর তীরবর্তী এলাকায় দশবেড বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা প্রয়োজন এবং এ জন্য স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্ধ রাখা। বিশেষ করে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য ভাসমান হাসপাতাল বা স্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে বরাদ্ধ রাখা।
৮. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় এলাকায় ঘন ঘন প্রাকৃতি দুর্যোগ, বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গন বা অন্যান্য সমস্যা লেগে থাকে। এ কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপকূলের জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে দুর্যাগ মোকাবিলায় আপদকালীন থোক বরাদ্ধ রাখা। সেটির ব্যবহারের ক্ষমতা ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনও, ডিসির নিকট রাখা।
সর্বোপরী বাংলাদেশের রাজধানী পর্যায়ে উপকূলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়সহ বোর্ড গঠনে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ রাখা হলে উপকূলবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দুর্যোগ মোবাবিলাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও জনদুর্ভোগ কমে আসবে।

আনন্দবাজার/টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন