ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সময়ের সঙ্গে বাড়ছে লাশ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তাসহ ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া এ ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিহতদের মধ্যে পাঁচ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। কুমিরা ফায়ার স্টেশনের নার্সিং অ্যান্টেনডেন্টস মনিরুজ্জামান (৩২), মমিনুল হকের (২৪) বাড়ি বাঁশাখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামে। তিনি ফরিদুল আলমের ছেলে। অন্যজন একই উপজেলার পূর্ব চারিয়ার নাপোড়া এলাকার মাহমুদুর রহমানের ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২৪), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬), রবিউল আলম (১৯), বাঁশাখালীর চনপাড়ার এলাকার আবব্দুল মজিদের ছেলে। এর মধ্যে মহিউদ্দীন বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসাই মো. আলাউদ্দীন তালুকদার মৃত্যুর তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু খবর পেয়েছি। তবে সবার পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় রাসায়নিক দ্রব্য বিস্ফোরণের কারণে বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে কন্টেইনার। আগুনের তীব্রতায়কাছে ঘেঁষতে পারছে না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পানি স্বল্পতার কারণে গত ৭ ঘণ্টারও বেশি সময়ে এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট।

শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। ডিপোটির মালিক স্মার্ট গ্রুপের এমডি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

রাসায়নিক দ্রব্য বিস্ফোরণের কারণে বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে কন্টেইনার, আগুনের তীব্রতায় কাছে ঘেঁষতে পারছে না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ১শ গজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে চলেছে ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ডিপোতে প্রায় দেড়শ’ কন্টেইনার আছে। কিন্তু রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে কন্টেইনার। যে কারণে আগুনের কাছেও ঘেঁষতে পারছি না আমরা। প্রায় ১শ গজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’

আহত ও নিহতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অজ্ঞাত একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্যাসের তীব্রতায় আমাদের প্রায় ৮ জন ফায়ার ফাইটার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে কিন্তু এখন কার কী অবস্থায় বা কোন পরিস্থিতিতে আছে তা বলতে পারছি না। পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। সেইসঙ্গে আশপাশের বাসা বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পা বিচ্ছিন্নসহ আরও অন্তত পাঁচ কনস্টেবল, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাহার হোসেন এবং শিল্প পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্যও আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে এসে সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী চট্টগ্রামের সব চিকিৎসককে চমেক হাসপাতালে এসে রোগীর চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তাছাড়া মুমূর্ষুরোগীদের আনতে সীতাকুণ্ডের ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে অনুরোধ করেছে ফায়ার সার্ভিস। আর রক্তদাতাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাসায়নিক দ্রব্য বিস্ফোরণের কারণে বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে কন্টেইনার, আগুনের তীব্রতায় কাছে ঘেঁষতে পারছে না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ১শ গজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে চলেছে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট। পানি স্বল্পতার কারণে এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন