চা বাগানের পাশাপাশি রিসোর্ট করা হলে এতে আর্থিক সংস্থান বাড়বে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি। তিনি বলেন, আমার বিয়ের ৪৮তম বর্ষ চলছে। আশা করি ৫০তম বর্ষে বাগানে বিয়ে বার্ষিকী উদযাপন করবো।
শনিবার রাজধানী ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টি বোর্ডের উদ্যোগে “২য় জাতীয় চা দিবস-২০২২” উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে চা বিদেশে রপ্তানির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চা আমাদের সম্ভাবনাময় রপ্তানি শিল্প। বাংলাদেশের চা এর মান উন্নত হবার কারনে বিশ্ববাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশে চা এর উৎপাদন বাড়ছে, একই সাথে অভ্যন্তরিন চাহিদা বাড়ছে। সেজন্য প্রত্যাশা মতো চা রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৯ সালে দেশে চা উৎপাদন হতো ৬০ মিলিয়ন কেজি, ২০২১ সালে বেড়ে উৎপাদিত হয়েছে ৯৬.৫১ মিলিয়ন কেটি। তারপরও তেমন রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। চা’র উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে, বিদেশ থেকে চা আমদানি করে আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মিটাতে হতো।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে দেশের উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদন শুরু হয়। ২০২১ সালে সেখানে ১৪.৫৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলায় এখন চা উৎপাদন হচ্ছে, এ অঞ্চলের মানুষ চা উৎপাদনে মনোযোগি হয়েছেন। সেখানে অনেক পতিত জমিতে এ চা উৎপাদন করা হচ্ছে। আজ দেশের উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদন না হলে বিদেশ থেকে চা আমদানি করতে হতো। চা এর উৎপাদন আমাদের আরও বাড়াতে হবে। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে। চা এর নতুন জাত উদ্ভাবন, উৎপাদন বৃদ্ধি, নিলাম, বাজারজাত করণসহ প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। চা এর উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা চা রপ্তানি করতে চাই। চা আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। দেশের মানুষ এখন চা পানে অভ্যস্থ হয়েছেন। মানুষ এখন নিয়মিতভাবেই চা পান করেন। মানুষর অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়েছেন, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, ফলে দিনদিন চা এর চাহিদা বাড়ছে। চা শিল্পের সাথে জড়িত মানুষের জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন এসেছে। তাদেরও জীবন মানের উন্নতি হয়েছে। চা এর উৎপাদন বাড়াতে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি করতে চা শিল্পের সাথে জড়িত সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এবারের জাতীয় চা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “চা দিবসের সংকল্প, সমৃদ্ধ চা শিল্প”।
ইমরান আহমদ বলেন, চা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। একসময় রপ্তানি ক্ষেত্রে আমাদের চা ছিল দ্বিতীয়স্থানে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পরাজিত শক্তি চা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি সাধাণ করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ চা শিল্পকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য ব্যাবপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের চা শিল্প আজ এ অবস্থানে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। চা শিল্পের রিটার্ন খুব তারাতারি পাওয়া যায় না। একটি চা বাগান থেকে চা পাতা আহরণে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ বছর। চা শিল্প থেকে উৎপাদন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। চা শিল্পের বিনিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদের হয়। এজন্য চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদের আর্থিক সহায়তা দরকার।
উল্লেখ্য, এবছর দেশে দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় চা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে চা শিল্পে অসামান্য অবদান এবং চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে ৪ জুন জাতীয় চা দিবস পালন করা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, টি ট্রেডার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি ওমর হান্নান, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি এম শাহ আলম এবং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম।
আনন্দবাজার/টি এস পি