কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এমভি জাহান মনি জাহাজে কর্মরত আবু রাশেদের নামের এক ক্যাডেটের রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যু দাবি করলেও বন্ধু-সহকর্মীদের অভিযোগ, জাহাজে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ও মানসিক নির্যাতনে ছিলেন রাশেদ। যশোর জেলার মনিরামপুরের বাসিন্দা রাশেদ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি থেকে পাসের পর প্রথমবার জাহাজে উঠেছিলেন।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌ বাণিজ্য দপ্তর (এমএমও)। জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কেএসআরএম গ্রুপের ব্রেভ রয়েল শিপ ম্যানেজমেন্টের (এসআর শিপিং) এমভি জাহান মনি জাহাজে সাইন অন করে ২৯ মার্চ জাহাজে ওঠেন আবু রাশেদ। ৩১ মে জাহাজের ডেকে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ভারতের মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মেডিক্যাল চেকআপের পর ২২ বছরের সুস্থ একজন তরুণ দুই মাসের মধ্যে কী ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেরিন ফিশারিজ একাডেমির এক্স ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
সংগঠনের সভাপতি কমডোর অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে ওঠার আগে হেলথ চেকআপ করানো হয়। শারীরিক সুস্থতা সনদ ঠিক থাকলেই জাহাজে ওঠার অনুমতি মেলে। আগে অসুস্থ ছিল কি না, সে বিষয়ে আমরা জানি না। মালিকপক্ষ বলেছে, মুম্বাইয়ের হাসপাতালে রাশেদের পোস্টমর্টেম করানো হচ্ছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, এমভি জাহান মনি জাহাজের চিফ অফিসার বিপ্লব চন্দ্র শীল রাশেদকে যখন-তখন ডেকে কাজে পাঠাতেন। ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে বাধ্য করতেন। এপ্রিলে অসুস্থ হলে জাহাজে তিনদিন আইসোলেডেট রাখা হয় তাকে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর পুনরায় তাকে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে বাধ্য করা হয়। এতে ধীরে ধীরে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং ওজন কমে যায়। অসুস্থতার বিষয়টি চিফ অফিসার বিপ্লব চন্দ্রকে জানালে কিছু অ্যান্টিবায়েটিক খেয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে ৩১ মে দুপুরে দায়িত্বপালনকালে জাহাজের ডেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। রাশেদের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করে তার পরিবারকে সঠিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সহকর্মীরা।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যান্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন শেখ মো. জালাল উদ্দিন গাজীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন নৌ বাণিজ্য দপ্তরের নৌ প্রকৌশলী ও শিপ সার্ভেয়ার মো. রফিকুল আলম ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ফিল্ড ইউনিট অফিসের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ হোসাইন। কমিটিকে মৃত্যুর কারণ, ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে ২০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।