ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তালের শাঁস বিক্রির ধুম

তালের শাঁস বিক্রির ধুম

চলছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। এ মাসে ফরিদপুরে নানা রকমের ফল বাজারে ওঠে। ইতিমধ্যে বাজারে আম, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গিসহ হরেক রকমের ফল দেখা মিলছে। তার মধ্যে নতুন করে দেখা মিলছে তালের শাঁস। এটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালকুই’ নামেই বেশি পরিচিত। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও স্বস্তি এনে দিচ্ছে এ কচি তালের শাঁস। তাইতো প্রচন্ড তাপদাহে চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে তালের শাঁসের কদর।

ফরিদপুরের বিভিন্ন শহর কিংবা বাজার এলাকার মোড়ে মোড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে তালের শাঁস। ছোট বড় প্রকার ভেদে প্রতিটির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। আম ও লিচুসহ মৌসুমি অন্য ফলের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু তালের শাঁসে এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে ভেজালমুক্ত তাল শাঁসের কদর বেশি।

ফরিদপুর শহরের তাল ব্যবসায়ী নাইম মোল্যা ও আশিক বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে পাইকারীর তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেড়ে এনে তাল শাঁস ফরিদপুর শহরসহ পার্শবর্তী হাটে ও মেলায় বিক্রি করি।

তারা বলেন, প্রতিবছরই এ সময়ে আমরা তালের শাস বিক্রি করে থাকি। গরমের এ দিনে তালের শাঁস বিক্রিও হয় ভালো। বেশ চাহিদাও রয়েছে। পাশাপাশি দামও ভালো রয়েছে। প্রতি পিস তালের শাস ১০ থেকে ১৫ টাকা (পিস) দরে এবং এক জোড়া ২০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

তারা আরও বলেন, ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রাম এলাকা থেকে এসব তালের শাঁস কিনেছি। প্রতি ১০০ তাল ৫০০ টাকা দরে কেনা হয়েছে। প্রতি পিস তাল ১০ টাকায় এবং তালের শাঁস প্রতি জোড়া ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছি। সারাদিনে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি করে আমার ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মুনাফা হয়।

তারা বলেন, প্রচÐ গরম থাকায় তালের শাঁসের চাহিদা রয়েছে বেশি। বড় তাল প্রতি বিচি শাঁস পাঁচ টাকা করে এবং তিন বিচি তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। কথা হয় তাল ব্যবসায়ী ছুরাপ মাতুব্বরের সাথে। এসময় এ তাল ব্যবসায়ী বলেন, তাল গাছ থেকে ফল কেটে আনা একটি কষ্টকর বিষয়। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কেটে আনতে হয়। একটি গাছে ৩০০ থেকে ৪০০টি তাল পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিক্রি শুরু হয়, চলে পুরো মাস জুড়ে। প্রতি পিস তাল কিনতে হয় প্রকারভেদে তিন থেকে পাঁচ টাকায়। বিক্রি করেন ৮ থেকে ১০ টাকা।

ফরিদপুর জেলগেটের সামনের সড়কে তালের শাঁস কিনতে আসা রাকিবুল ইসলাম বলেন, তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। প্রচÐ গরমে তালের শাঁস খেতে ভালই লাগে। তাইতো তালের শাঁস কিনতে এলাম। তালের শাঁস কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, বছরের এই সময়ে তালের শাঁস খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে গরমের দিনে তালের শাঁস খুবই উপকারী। তাই কিনলাম। একটু দাম বেশি তারপরেও ছেলেমেয়েদের খাওয়ার জন্য নিলাম। আরেকজন তাল শাঁস ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে দেখি রাস্তার একপাশে তালের শাঁস বিক্রি করছে, তাই শখ করে ১০ পিস তালের শাঁস নিলাম।

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. খবিরুল ইসলাম জানান, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ বি সি সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং কঁচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন