রাজশাহী শিক্ষা নগরী। সেই শিক্ষা প্রসারে আরো একটি সফলতার পালক যুক্ত হতে যাচ্ছে শিক্ষা নগরীতে। দেশের দ্বিতীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি)। শুধু শিক্ষা প্রসারেই নয়। উত্তরে যে কয়েকটি জেলা আছে সেইসব এলাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটে আসেন রাজশাহী মহানগরীতে। রামেবি’র মাধ্যমে সাধারণ মানুষও পেতে যাচ্ছে আরো উন্নত চিকিৎসাসেবা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষের।
চলতি মাসেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ওঠার কথা রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প। শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতাল। দেশের উত্তরাঞ্চলে মেডিকেল শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী মহানগরীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুই ধাপে সম্পন্ন হবে প্রকল্প। প্রথম ধাপে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।
প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে সেবার পরিসর বাড়বে কয়েক গুণ। বিশেষায়িত ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখবে এ হাসপাতাল। রাজশাহী মহানগরীতে ৬৮ একর জায়গায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। ৬৯টি বিভাগের কলেবরে বিস্তৃত হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (আরএমইউ) রেজিস্ট্রার অফিস নির্ধারিত কাজ দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করায় ৮০টি মেডিকেল, নার্সিং, ডেন্টাল কলেজ এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর একাডেমিক কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। অনুমোদন পেলে খুব শিগগির অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে।
পরীক্ষক, পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মীরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট যে হিসাব বিভাগে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবলের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পরিশোধ হয়েছে। কলেজ পরিদর্শনসংক্রান্ত কাজও হালনাগাদ করা হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে।
উপাচার্য আরো বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের নিয়োগের ফলে কাজে গতিশীলতা এসেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদিত বিধি অনুসরণের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও বরাদ্দের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকি কভিড-১৯ মহামারির সময় ব্যাহত একাডেমিক কার্যক্রমও কাটিয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভাগে অভিজ্ঞ ও যোগ্য নেতৃত্বের ফলে আরএমএউ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রায় এক বছর এগিয়ে আছে বলে জানান তিনি। চিকিৎসকের পাশাপাশি দক্ষ নার্স তৈরির জন্য ক্যাম্পাসে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আরএমইউ সূত্রমতে, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিকে আরএমইউর আওতাধীন করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৩টি সরকারি, ১৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। দুটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, ছয়টি সরকারি ও ৩১টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ, একটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং ৭৪টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আরএমইউ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে সফলভাবে এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) কোর্স সফলভাবে পরিচালনা করছে। ডাটা এন্ট্রি, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণসহ সব কার্যক্রম ডিজিটালভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে এই প্রথম রামেবিতে শুরু থেকে কোডিং ডিকোডিং পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিচ্ছে প্রথম পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করছে যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের অধীন পিএইচডিসহ স্নাতকোত্তর কোর্সও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক